উদ্দীপকঃ-
"আর কে ক্যাবল" কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ মাহতাব প্রথম জীবনে শ্রমিক ছিলেন। বিশ্বস্ততা, নিরলস পরিশ্রম ও প্রতিভাবলে তিনি প্রভুর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। প্রভুর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া তিনি স্মৃতিবিজড়িত সৌধ ও মসজিদ কোম্পানি প্রাঙ্গণে নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান করতেন তাই তাকে দানেশ বলা হতো। তিনি প্রশাসনিক কাজে খুব দক্ষ ছিলেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন যা খুব প্রশংসিত হয়।
ক. সুলতান মাহমুদ কোন রাজ্যের শাসক ছিলেন?
খ. জয় চাঁদ কেন পৃথ্বিরাজ্যের সাথে যোগ দেয়নি?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মিনহাজ মাহতাব এর কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকান্ডের সাথে সালতানাতে কোন শাসকের কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কারণ ছাড়াও সালতানাতের স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের আরও কারণ ছিল? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ-
ক) সুলতান মাহমুদ গজনি রাজ্যের শাসক ছিলেন।
খ) জয়চাদের কন্যাকে অপহরণ করার কারণে রাজা জয়চাঁদ পৃথ্বিরাজের সাথে যোগ দেয়নিকনৌজ বংশের শেষ রাজা জয়চাঁদ। তার কন্যাকে অপহরণ করায় পৃথ্বিরাজের সাথে তার শত্রুতা সৃষ্টি হয়। ফলে মুহাম্মদ ফ্রীর ভারত আক্রমণকালে তিনি পৃথ্বিরাজের জোটে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত মিনহাজ মাহতাব এর কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের সাথে কুতুবউদ্দিন আইবেকের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।ইতিহাসে যে কয়জন ব্যক্তি সামান্য ক্রীতদাস থেকে একটি রাষ্ট্রের শাসনকর্তা ও একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছেন কুতুবউদ্দিন আইবেক তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রাথমিক জীবনে মুহাম্মদ ঘুরীর ক্রীতদাস ছিলেন। তবে তিনি তার স্বীয় গুণাবলির বদৌলতে ভারতের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং স্বাধীন দিল্লি সালতানাতের গোড়াপত্তন করেন। উদ্দীপকে অনুরূপ একজন শাসকের প্রতিচ্ছবি লক্ষণীয়।উদ্দীপকে দেখা যায়, 'আর কে ক্যাবল' কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ মাহতাব প্রথম জীবনে শ্রমিক ছিলেন। বিশ্বস্ততা, নিরলস পরিশ্রম ও প্রতিভাবলে তিনি প্রভুর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন এবং প্রভুর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া তিনি স্মৃতিবিজড়িত সৌধ ও মসজিদ কোম্পানি প্রাঙ্গণে নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান করতেন বলে তাকে দানেশ বলা হতো। অনুরূপভাবে কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম জীবনে দাস হলেও স্বীয় যোগ্যতায় মুহাম্মদ ঘুরীর প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। ১১৯২ সালের তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভ করলে মুহাম্মদ ঘুরী তাকে দিল্লির শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। মুহাম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ ঘুরী তাকে রাজদণ্ড প্রদান ও সুলতান উপাধিতে ভূষিত করেন। গজনির প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে তিনি দিল্লি সালতানাতের ভিত্তি রচনা করেন। সালতানাতের নিরাপত্তা বিধান, অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও প্রজাকল্যাণ নিশ্চিতকরণে তিনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। স্থাপত্য শিল্পের প্রতি ও তার তীব্র অনুরাগ ছিল। কুয়াত উল ইসলাম মসজিদ এবং আজমীরের আড়াই-দিনকা-ঝোপড়া মসজিদ তার স্থাপত্যকীর্তির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তিনি দিল্লিতে বিখ্যাত কুতুব মিনার নামক বিজয় স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ সূচনা করেছিলেন। অসীম উদারতা ও দানশীলতার জন্য তিনি 'লাখবক্স' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের মিনহাজ মাহতাব এবং কুতুবউদ্দিন আইবেক একে অপরের প্রতিচ্ছবি।
ঘ) হ্যাঁ, আমি মনে করি উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধের নির্মাণের কারণ ছাড়াও সালতানাতের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আরও কারণ ছিল।কুতুবমিনার ছিল কুতুবউদ্দিন আইবেকের নির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি। ১১৯২ সালে রাজ্য বিজয়ের স্মারক এবং ইসলামের বিজয়গাঁথা বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে তিনি দিল্লিতে এই মিনারটির নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং তা সম্পন্ন করেন পরবর্তী সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ। এটি ছিল তৎকালীন বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার। কুতুবমিনার নামক বিজয় স্মৃতিস্তম্ভটি কুতুবউদ্দিন আইবেকের স্থাপত্য কীর্তির প্রকৃষ্ট নজির। দূর থেকে মিনারটি অবলোকন করলে একে বৃহদাকার কারখানার চিমনি অথবা বাতিঘরের মতো মনে হয় এবং কাছ থেকে লোহিত শিলা ও মর্মর পাথরে তৈরি উর্ধ্বাকাশে উঠে যাওয়া বাশির আকৃতির ন্যায় প্রতীয়মান হয়। মিনারটি ৪ তলা বিশিষ্ট এবং ৪৭ ফুট ব্যাসের বুনিয়াদের ওপর নির্মিত। এর বারান্দা সমকোণ বিশিষ্ট পাথরের দ্বারা নির্মিত। সাতটি স্তরে বিভক্ত মিনারটির উপরের দুটি স্তর ভেঙে গিয়েছে। তবে অক্ষত অবস্থায় এর উচ্চতা ছিল ৩০০ ফুট। বর্তমানে এটির উচ্চতা ২২০ ফুট। সর্বোচ্চ স্তরে গমনের জন্য ইমারতের ভেতরে ৩৭৯টি ধাপবিশিষ্ট একটি ঘোরানো সিঁড়ি রয়েছে এবং সিঁড়ির গায়ে কুরআনের আয়াত খোদাই করা আছে। ইসলামের বিজয়গাঁথা বিশ্ব দরবারের উপস্থাপনের লক্ষ্যে এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে আইবেক এটি নির্মাণ করেন। এটি আজানের জন্য ব্যবহৃত হতো।পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের বিজয়গাঁথা উপস্থাপনের পাশাপাশি ধর্মীয় উদ্দেশ্যেও কুতুবমিনার নির্মাণ করা হয়।
উদ্দীপকঃ- ক্ষমতায় এসেই 'X' সরকার তাদের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী কৃষকদের ঋণ মওকুফ করেন। ভূমিকরের পরিমাণ হ্রাস করেন। রাজ্যের আয় বৃদ্ধির জন্য ১২০০ বাগান নির্মাণ ও সংস্কার করেন। তাছাড়া জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে দালান কোঠা তৈরি, সেতু ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, খাল খনন, হাসপাতাল নিমাণ, বিধবা ও এতিম মেয়েদের বিবাহ দান ও বেকারদের জন্য কাজের ব্যবস্থা প্রভৃতি ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
ক. সুলতান রাজিয়া কে ছিলেন?
খ. তরাইনের ২য় যুদ্ধে ঘুরীর জয়লাভের কারণ কী ছিল?
গ. উদ্দীপকের সরকারের ন্যায় দিল্লি সালতানাতের কোন সরকার রাজস্ব ব্যবস্থায় কৃষকদের প্রতি সদয় ছিলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উত্ত সুলতানের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা বলা যেতে পারে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ-
ক) সুলতান রাজিয়া ছিলেন দিল্লি সালতানাতের প্রথম নারী শাসক।
খ) তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল একটি চূড়ান্ত মীমাংসাত্মক যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী (ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠাকারী) ও তার বাহিনী দীপ্ত শপথে যুদ্ধ করে। পৃথ্বিরাজ (দিল্লি ও আজমিরের রাজপুত এবং চৌহান বংশের রাজা) ও সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। ফলে ভারতীয় রাজ্যগুলোর ওপর মুহাম্মদ ঘুরীর চূড়ান্ত সফলতা সুনিশ্চিত হয় এবং ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের স্থায়ী ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।
গ) উদ্দীপকের সরকারের ন্যায় দিল্লি সালতানাতের সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক রাজস্ব ব্যবস্থায় কৃষকদের প্রতি সদয় ছিলেন।ইতিহাসে এমন অনেক শাসক রয়েছেন, যারা প্রজাকল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এরা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা তৎপর থেকে তাদের সার্বিক উন্নতির প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। উদ্দীপকে বর্ণিত 'X' সরকার এবং দিল্লি সালতানাতের ফিরোজ শাহ তুঘলক জনকল্যাণকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে খ্যাত হয়ে আছেন।উদ্দীপকে দেখা যায়, ক্ষমতায় এসেই 'X' সরকার তাদের নির্বাচিত ইশতেহার অনুযায়ী কৃষকদের ঋণ মওকুফ করেন। ভূমিকর হ্রাস করেন। রাজ্যের আয় বৃদ্ধির জন্য ১২০০ বাগান নির্মাণ ও সংস্কার করেন। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকও ক্ষমতায় আরোহণ করে কৃষকদের বকেয়া ঋণ (তাকাভি) মওকুফ করেন। পূর্ববর্তী সময়ে কৃষকদের ওপর যে সকল অবৈধ ও নিপীড়নমূলক কর ধার্য করা হয়েছিল তা বাতিল করেন। রাজস্ব প্রশাসনের দুর্নীতি রোধে সুলতান রাজস্বকর্মীদের হয়রানি বন্ধ এবং তাদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শতদ্রু থেকে ঘাগরা পর্যন্ত ৬ মাইল এবং যমুনা থেকে হিসার পর্যন্ত দেড়শ মাইল দীর্ঘ দুটি খাল খননের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া সেচ সুবিধার জন্য বহু কূপ খনন ও ৫০টির মতো বাঁধ নির্মাণ করেছিল। ফলে অনেক পতিত জমি চাষের আওতায় আসে এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ও সুলতান আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্কসহ নানা প্রকার প্রান্তিক কর বিলোপ করে বাণিজ্যের প্রসার ঘটান। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সরকারের মতো সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক রাজস্ব ব্যবস্থায় কৃষকদের উন্নতিকল্পে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
ঘ) হ্যাঁ, উক্ত সুলতান তথা সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা বলা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।কোনো এলকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অপরিহার্য। সালতানাতের সুলতানগণ এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। এক্ষেত্রে ফিরোজ শাহ তুঘলক ছিলেন অগ্রগণ্য।সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক জনদরদি শাসক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। প্রজাদের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ। তিনি দুস্থ, দরিদ্র ও অনাথদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে 'দারুস শিফা' নামক একটি বিখ্যাত দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ছাড়াও ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এছাড়া প্রজাদের কল্যাণের জন্য তিনি বেশ কিছু জনকল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি দরিদ্র প্রজাদের সাহায্যে ও তাদের কন্যাদের বিবাহদান এবং অনাথ ও বিধবাদের ভরণপোষণের জন্য দেওয়ান-ই-খয়রাত বিভাগ স্থাপন করেন। তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য চাকরি দপ্তর স্থাপন করেন। তাছাড়াও তিনি প্রজাদের কল্যাণে সরাইখানা এবং নলকূপ স্থাপন করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। তার এসব জনদরদি কর্মকাণ্ড ইতিহাসে 'মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা' নামে পরিচিত।উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায়, সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণমূক ব্যবস্থাকে মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা বলা যায়।