প্রশ্ন- খুব কম বয়সেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল 'ক'। কালক্রমে নিজের যোগ্যতা ও মেধাগুণে নিজ দেশের শাসক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তিনি। একসময় তিনি একটি বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দানশীলতার জন্য তাকে বিশেষ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কিন্তু তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ বংশের মোট এগারো জন শাসক ছিলেন। তবে এদের সবাই দাস ছিলেন না।
ক. কুতুবউদ্দিন আইবেক কে ছিলেন?
খ. কুতুবউদ্দিন আইবেককে লাখবক্স বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' এর কৃতিত্বের সাথে তোমার পঠিত দিল্লি
সালতানাতের কোন শাসকের কৃতিত্ব সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'ক' রাজার কৃতিত্বের তুলনার তোমার পঠিত শাসকের কৃতিত্ব অধিক প্রশংসার দাবিদার- যুক্তি দাও।
উত্তরঃ-
ক) কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা।
খ) সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা জনগণের মাঝে দান করতেন বলে তাকে লাখবক্স বা লক্ষ টাকা দানকারী বলা হয়। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন এক মহানুভব শাসক। তার বদান্যতা কিংবদন্তির পর্যায়ভুক্ত ছিল। আর দানশীলতায় তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ। প্রতিদিন তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা জনগণের মাঝে দান করতেন। বদান্যতায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হাতেম।
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক'-এর কৃতিত্বের সাথে দিল্লি সালতানাতের শাসক কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্ব সামঞ্জস্যপূর্ণ।জনাব 'ক' একজন ক্রীতদাস ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের অবস্থানকে সুসংহত করতে তিনি বিভিন্ন শক্তিধর ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দানশীলতার জন্য তিনি বিশেষ উপাধিও পান। সুলতান কুতুবউদ্দিনের জীবনেও এরূপ ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করা যায়।ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক নিজ যোগ্যতাবলে সুলতানের ঘোড়াশালের দায়িত্ব পান। ভারত বিজয়ের সময় তিনি ঘুরীর অন্যতম সেনাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ১২০৬ সালে মুহাম্মদ ঘুরী মৃত্যুবরণ করলে তার ভ্রাতুস্পুত্র গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ গজনির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি কুতুবউদ্দিনকে দাসত্বের ছাড়পত্রসহ দিল্লির স্বাধীন সুলতানের স্বীকৃতি দেন। কুতুবউদ্দিন নিজের অবস্থানকে সুসংহত করার লক্ষ্যে মুহাম্মদ ঘুরীর সেনাপতি এবং কিরমানের শাসনকর্তা ইলদুজের ভগ্নিকে বিয়ে করেন। তিনি নিজের ভগ্নিকে সিন্ধুর শাসনকর্তা নাসিরউদ্দিন কুবাচার সাথে বিবাহ দেন। উপরন্তু তিনি ইলতুৎমিশের সঙ্গে নিজ কন্যার বিবাহ দেন। এছাড়া তার উদারতা, দানশীলতা এবং বদান্যতা সম্পর্কে সমকালীন ঐতিহাসিকগণ প্রশংসিত হয়ে তাকে 'লাখ-বক্স' উপাধিতে ভূষিত করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের 'ক' শাসক সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের সাথে তুলনীয়।
ঘ) উদ্দীপকের 'ক' রাজা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ ছিলেন। কিন্তু কুতুবউদ্দিন আইবেক বিজেতা ও ন্যায়বিচারক হিসেবে একজন সফল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই 'ক' শাসকের চেয়ে তিনি অধিক কৃতিত্বের দাবিদার বলে আমি মনে করি।উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি যে, 'ক' রাজা একজন ক্রীতদাস হওয়া সত্ত্বেও প্রভুর মন জয় করে একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার ব্যর্থতা তার সফলতাকে মলিন করে দেয়। অপরদিকে, একজন সুদক্ষ যোদ্ধা ও বিজেতা হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেকের কৃতিত্ব সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।মুহাম্মদ ঘুরীর প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক রাজ্য বিস্তৃতি কুতুবউদ্দিন আইবেকের সামরিক সাফল্যের পরিচয় বহন করে। তিনি দিল্লি, মিরাট, রণথম্ভোর, হানসি, বাদাউন ও কনৌজ দখল করে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সাধন করেন। উপরন্তু তিনি বারানসি, কালিঞ্জর ও মাহোবা দখল করে তার সামরিক প্রতিভা ও সাহসিকতার অসামান্য পরিচয় প্রদান করেন। তার অসামান্য সামরিক প্রতিভার বলেই তিনি বিশ বছরের মধ্যে সিন্ধু থেকে গঙ্গা এবং হিমালয় থেকে বিন্ধ্যা পর্বত পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি হতে সক্ষম হন। এছাড়া তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক এবং ন্যায়বিচারক। রাজ্যশাসন এবং প্রজাপালনের কৃতিত্ব তার অপরাপর গুণাবলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।পরিশেষে বলা যায়, সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক একজন সফল শাসক, বিজেতা ও ন্যায়বিচারক হিসেবে উদ্দীপকের 'ক' শাসক অপেক্ষা অনেক এগিয়ে।