উদ্দীপকঃ-
=> ইহার পর হৈম তাহার চিরদিনের স্নিগ্ধ হাসিটুকু আর একদিনের জন্যও দেখি নাই। তাহারও পরে কি হইল সে কথা আর বলিতে পারি না। শুনিতেছি মা পাত্রী সন্ধান করিতেছেন। হয়তো আর একদিন মার অনুরোধ অগ্রাহ্য করিতে পারিব না, ইহাও সম্ভব হইতে পারে। কারণ থাক! আর কাজ কী? (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ক. বিসর্জন নাটকটির রচয়িতা কে?
খ. মঙ্গলকাব্যকে উপন্যাস বলা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকটি সাহিত্যের রূপ ও রীতি প্রবন্ধের যে দিকটি নির্দেশ করে, তার পরিচয় তুলে ধর।
ঘ. উদ্দীপকে অনুসৃত রীতির সঙ্গে উপন্যাসের বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ-
ক) বিসর্জন নাটকটির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
খ) আঙ্গিকগত পার্থক্যের কারণে মঙ্গলকাব্যকে উপন্যাস বলা যায় না।মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য লিখিত হতো কবিতার মতো ছন্দোবদ্ধভাবে। যদিও এসব কবিতায় গল্প বা ঘটনাপ্রবাহ থাকত, তবুও এগুলোকে উপন্যাস বলা যায় না। উপন্যাস লিখিত হয় নিরেট গদ্যসাহিত্যে, সেখানে ছন্দের স্থান নেই বললেই চলে। তাই মঙ্গলকাব্য কাহিনিনির্ভর হলেও তাকে উপন্যাস বলা যায় না।
গ. উদ্দীপকটি "সাহিত্যের রূপ ও রীতি" প্রবন্ধে ছোটগল্পের রীতিটি নির্দেশ করে।সাহিত্যের রূপ ও রীতি প্রবন্ধে সাহিত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ শাখা ছোটগল্প। ছোটগল্পে কাহিনির বিস্তারিত বর্ণনা থাকে না। এটি হঠাৎ করে শুরু হয়ে হঠাৎ করে শেষ হয়। জীবনের খণ্ডচিত্র উপস্থাপন করা হয় এ রচনায়। তাই সর্বদাই পাঠক হৃদয়ে অতৃপ্তির বেদনার জন্ম দিয়ে শেষ হয় ছোটগল্পের আখ্যানভাগ।উদ্দীপকেও ছোটগল্পের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে গল্পকথকের জবানিতে জীবনের এক খণ্ড অংশ তুলে ধরা হয়েছে। হৈমর স্বামী শেষবারের মতো দেখেছে হৈমর মুখের হাসি। এর পরের অংশ বলেনি। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিয়েতে পিতামাতার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারে। সে প্রতিটি চরণেই আশঙ্কার কথা বলেছেন, যা পাঠক হৃদয়ে অতৃপ্তি সৃষ্টিতে সহায়ক। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে প্রবন্ধের ছোটগল্পের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে।
ঘ) উদ্দীপকে অনুসৃত ছোটগল্পের রীতির সঙ্গে উপন্যাসের ব্যাপক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।উপন্যাস মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নানা ঘাতপ্রতিঘাত নিয়ে রচিত হয়। এতে বিষদভাবে স্থান পায় মানুষের হাসি-কান্না, মানসিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক রীতিনীতি, চলমান ঘটনা ইত্যাদি। উপন্যাস সাধারণত গদ্যসাহিত্যে বর্ণনাক্রম ভঙ্গিতে রচিত হয়। বাস্তব কাহিনি বর্ণনার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র খেলা করে আমাদের চোখের সামনে।উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'হৈমন্তী' গল্পের একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে। ছোটগল্পের ঘটনা বা কাহিনির বিস্তার থাকে না; কোনো তত্ত্ব বা উপদেশ থাকে না। গল্পশেষে পাঠকের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। পাঠকমনে জানার এক অতৃপ্ত বাসনা থাকে। তাই এখানে হৈমর স্নিগ্ধ হাসি মিলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত তার মৃত্যুকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। হৈমর মৃত্যুর পর কী ঘটে, তার স্বামী কী আবার বিয়ে করে এমনই নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, যা ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যের সার্থক সফুরণ।উদ্দীপকের বর্ণনায় ছোটগল্পের কতকগুলো রীতি গল্পের খন্ডাংশের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে উপন্যাসের মতো কাহিনির শাখা-উপশাখা, একাধিক চরিত্রের আনাগোনা কিংবা কাহিনির সমাপ্তি টানা হয়নি; কিন্তু উপন্যাসে বৃহৎ আকারে ঘটনার আদ্যোপান্ত সমাপ্তি থাকে। আর সেই বিচারেই বলা যায়, উদ্দীপকের অনুসৃত রীতির সঙ্গে উপন্যাসের বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।