উদ্দীপকঃ-
=> সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে আরবরা চরম বর্বরতা ও অন্ধকারের মাঝে ডুবেছিল। তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরমভাবে অধঃপতিত। খুন, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার, মদ্যপান, জুয়া খেলা, কন্যাশিশু হত্যা করার মতো জঘন্য কাজে তারা লিপ্ত ছিল। তারা মূর্তিপূজা করত। তাদের মাঝে নৈতিকতার লেশমাত্রও ছিল না। আরবদের এ চরম অবক্ষয় রাসুল (স.)-কে উদ্বিগ্ন করে। তিনি এ দুঃসহ অবস্থা হতে পরিত্রাণের জন্য হেরা গুহায় ধ্যান শুরু করলেন। তার তপস্যার ফলে বিশ্ববাসীর জন্য অবতীর্ণ হলো মহাগ্রন্থ আল কুরআন।
ক. আল কুরআন কার কালাম?
খ. আল কুরআন অবতরণের প্রেক্ষাপট জানতে হবে কেন?
গ. উদ্দীপকের সমাজের সাথে আধুনিক সমাজের তুলনামূলক আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের গ্রন্থটি তৎকালীন আরব সমাজের পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল – বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) আল কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম।
খ) সহজভাবে কুরআন বোঝার জন্য এর অবতরণের প্রেক্ষাপট জানতে হবে।
কুরআন অবতরণের কারণ বা "শানে নুজুল" জানা থাকলে আল কুরআন সহজভাবে বোঝা যায়। কারণ মানবজীবনের নানা প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে কুরআন অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে। এই প্রেক্ষিত বা পটভূমি শানে নুজুল হিসেবে পরিগণিত হয়। এতে কুরআনের প্রতিটি অংশ বা আয়াত যে অবস্থাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে আয়াতের অর্থ, উদ্দেশ্য ও সঠিক মর্মার্থ অবগত হওয়া যায়।
গ) উদ্দীপকের সমাজ তথা জাহেলি যুগের সাথে আধুনিক সমাজের সাদৃশ্য রয়েছে।
রাসুল (স.) এর আগমনের সময় আরব সমাজের অবস্থা জাহেলি যুগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জাহেলি যুগ অর্থ হচ্ছে অন্ধারের যুগ। যে সমাজে ধর্ম, মানবতা, নীতি-নৈতিকতার বালাই ছিল যেখানে মানুষে মানুষে হানাহানি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। 'জোর যার মুল্লুক তার' নীতি প্রচলিত ছিল, তাই জাহেলি যুগ যার বর্ণনা আমরা উদ্দীপকে পাই। উদ্দীপকের সমাজের সাথে আধুনিক সমাজের অনেকাংশে মিল রয়েছে। আমরা জানি, জাহেলি যুগে খুন, সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার মদ্যপান, জুয়া খেলা ও কন্যা শিশু হত্যার মতো অপরাধে লোকেরা জড়িত ছিল। আধুনিক সমাজও এ থেকে কোনো অংশে কম যায় না, পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা প্রতিদিন শত শত অপরাধের ঘটনা দেখতে পাই এমন কোনো দিন নেই যেদিন সমাজে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় না। তখনকার সময়ে জন্মের পরে কন্যা সন্তানকে হত্যা করা হতো। আর এখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে জেনে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। সে যুগের কারও অধিকারের ব্যাপারে অন্যের মাথাব্যথা ছিল না। সবাই দুর্বলকে শোষণ করত। বর্তমানেও তা চলছে। ক্ষমতার দম্ভে যে যা পারছে সবাই গ্রাস করছে আর দুর্বল ধুকে ধুঁকে মরছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজের সাথে আধুনিক সমাজের খুব একটা পার্থক্য নেই। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কুরআনভিত্তিক সমাজ গড়ার কোনো বিকল্প নেই।
ঘ) উদ্দীপকের গ্রন্থ তথা মহাগ্রন্থ আল কুরআন তৎকালীন আরব সমাজ পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। মহাগ্রন্থ আল কুরআন এক মহাবিপ্লবী গ্রন্থ। এটি সকল যুগে সমান প্রভাব বিস্তারকারী নিখুঁত সংবিধান। মানবতার মুক্তির জন্য বিস্ময়কর পরশপাথর, যার সংস্পর্শে এসে কাফির হয়ে যায় মুত্তাকি, খুনী হয়ে যায় জীবন রক্ষাকারী, ডাকাত হয়ে যায় সম্পদের পাহারদার, ব্যভিচারী হয়ে যায় নারীর নিরাপত্তার প্রতীক। যার মহা আকর্ষণে অল্প দিনেই একটি জাতির আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। উদ্দীপকে এ মহাগ্রন্থের ইঙ্গিত পাই। উদ্দীপক অনুযায়ী জাহেলি যুগের সার্বিক অধঃপতন থেকে মুক্তির জন্য পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়। বস্তুত রাসুল (স.) যখন নবুয়ত লাভ করলেন তার অব্যবহিত পূর্বে আরব সমাজ ছিল ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত। তাদের জীবনে মানবতার লেশমাত্র ছিল না। এমন কোনো অপরাধ ছিল না যা তারা করত না। এমন সময় মহানবি (স.) তাদেরকে কুরআনের পথে ডাকলেন। কুরআনের আলোয় তারা আলোকিত হলেন। জান্নাত জাহান্নামের বিস্তারিত বিবরণ তাদের হৃদয়ে দোলা দিল। মানুষ হিসেবে একের প্রতি অন্যের কর্তব্য, পরিবার পরিজন তথা সন্তানসন্ততিকে ভালোবাসা, নারীর মর্যাদা দানের গুরুত্ব তারা বুঝতে পারে। বিভিন্ন অপরাধের পার্থিব ও পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে তারা জানতে পারে। ফলে তাদের মধ্যে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে। যে আরবের সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অধঃপতিত, কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে তাদের জীবনে শৃঙ্খলা আসে, ধর্মীয় সম্প্রীতি আসে আর তারা পায় বৈষম্যহীন এক অর্থব্যবস্থা।
সুতরাং নিঃসন্দেহে বলতে পারি বর্তমান সমাজে কুরআনের শিক্ষা প্রয়োগ করলে আরব সমাজের মত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।