=> নাদিয়া ও সুমাইয়া দুজন সহপাঠী। একদিন নাদিয়া তার দাদিকে প্রশ্ন করল 'দাদি বলো তো বিশ্বের অধিক পঠিত গ্রন্থ কোনটি?' দাদি বলল, এটা এমন একটি গ্রন্থ যা ত্রুটিমুক্ত এবং ইহা বিকৃত করা সম্ভব নয়। অপরদিকে সুমাইয়ার ক্লাস টিচার অধ্যাপক মরিয়ম জামিল বলেন, আমার প্রিয় ছাত্রীরা তোমরা নামাজ পড়ার পাশাপাশি এমন একটি নফল ইবাদত করো যেটিতে পুণ্যের পাশাপাশি চারিত্রিক সংশোধন ও আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। অতঃপর তিনি সেটি বলেন-
ذُلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
ক. সূরা কী?
খ. মক্কি সুরায় ইসলামের ভীত তৈরি করা হয়েছে- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন গ্রন্থের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অধ্যাপক মরিয়ম জামিলের বক্তব্যের সাথে তার উদ্ধৃতির প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) সূরা অর্থ সীমারেখা। আল কুরআনের একেকটি অধ্যায়কে সুরা বলা হয়।
খ) মহানবি (স) এর হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত যে সুরাসমূহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলো মক্কি সুরা নামে পরিচিতি।মক্কি সুরায় ইসলামের ভীত তৈরি করা হয়েছে। কেননা, রাসুল (স) বলেন, ইসলাম পাঁচটি জিনিসের ওপর স্থাপিত, 'ইমান, সালাত, জাকাত, হজ ও সাওম।' আর মক্কি সুরায় এই বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারাই মুত্তাকি যারা অদৃশ্যে বিশ্বাসস্থাপন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে (সুরা বাকারা-৩-৪)
গ) উদ্দীপকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের কথা বলা হয়েছে। কুরআন ) القرآن(শব্দটি শব্দমূল থেকে গঠিত)। قرا( শব্দের অর্থ: পাঠ করা, আবৃত্তি করা ইত্যাদি। আসমানি কিতাবগুলোর মধ্যে কুরআন সর্বাধিক পঠিত বিধায় একে কুরআন বলে নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কুরআনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা সর্বাধিক পঠিত যা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।উদ্দীপকের নাদিয়ার সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তার দাদি বলেন 'এটি এমন এক গ্রন্থ যা ত্রুটিমুক্ত এবং তা বিকৃত করা সম্ভব নয়'। তিনি নিঃসন্দেহে আল কুরআনের কথা বলেছেন। কেন না, আল্লাহ তায়ালার বাণী কুরআন যে নির্ভুল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "এটি এমন কিতাব যাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই" (বাকারা-২)। আবার এই কিতাবের সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার। তাই এটি চিরকাল অবিকৃত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি এই কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর আমি স্বয়ং এর সংরক্ষক (সুরা আল হিজব-৯) সুতরাং আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ আল কুরআনের কথাই বলা হয়েছে।
ঘ) অধ্যাপক মরিয়ম জামিলের বক্তব্যের সাথে তার উদ্ধৃতি প্রাসঙ্গিক। আল কুরআন মানবজাতির মুক্তির দিশারি। যারা এর আলোকে আলোকিত হতে চায় তাদের জন্য এটি পথপ্রদর্শক। এর মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন নিশ্চিত কল্যাণ লাভ করা যায়, যা অধ্যাপক মরিয়ম জামিলের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।অধ্যাপক মরিয়ম জামিল তার বক্তব্যে বলেন, নামাজ পড়ার পাশাপাশি এমন একটি নফল ইবাদত করতে হবে যাতে পুণ্যের পাশাপাশি চারিত্রিক সংশোধন ও আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। তারপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি ذُلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ) COASIS IS তার বক্তব্যে তিনি কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব বুঝাতে আয়াতটি উল্লেখ করেন। তার উল্লিখিত আয়াতের অর্থ হচ্ছে 'এটি তথা কুরআন এমন এক গ্রন্থ যাতে কোনো সন্দেহ নেই আর তা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। এটি তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষ প্রচুর পুণ্য অর্জন করে। রাসুল (স) বলেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত তিলাওয়াত করে সে দশটি সওয়ার পাবে (বায়হাকি)'। আর কুরআনের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করলে মানুষের চরিত্র পরিশুদ্ধ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কুরআন তিলাওয়াত ও এর মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটানোর জন্য রাসুল (স) কে প্রেরণ করা হয়েছে (সুরা জুমুআ: ২)। এর মাধ্যমে মানুষ প্রশান্তি লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, 'কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে (সুরা আর রাদ: ২৮)।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব বোঝাতে মরিয়ম জামিলের উল্লিখিত আয়াত প্রাসঙ্গিকতা লাভ করেছে।