উদ্দীপকঃ-
=> পবিত্র রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ শেষে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, এ মাসের দান-খয়রাত, জাকাত, সাওম, তিলাওয়াত, তাসবিহ সবকিছুর ছাওয়াব বেশি হবার কারণ হলো এ মাসে একটি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম সাহেব আরো বললেন যে, খাঁটি মুত্তাকি হতে এবং সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই সুরা বাকারার শুরুতে বর্ণিত গুণাবলি অর্জন করতে হবে।
খ. মক্কায় অবতীর্ণ সুরা সহজ, সরল ও ছোট- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ছাওয়াব বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে যে কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তার অবতরণের ইতিহাস বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সফলতার শর্ত হিসেবে মুত্তাকির গুণাবলি বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
খ) মক্কায় অবতীর্ণ সুরাসমূহ ইসলামের প্রাথমিক সুরা হওয়ায় সেগুলো সহজ, সরল ও ছোট।
নবি করিম (স) মদিনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত সেসসব সুরা অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোকে মক্কি সুরা বলে। এগুলোতে তাহওহিদ, রিসালাত, আখেরাত, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা এসেছে। এসুরাগুলোতে অন্তমিল রয়েছে। এ সুরাগুলোর মাধ্যমে মানুষকে সহজ, সরল ও সংক্ষিপ্ত আকারে ইমানের দিকে আহ্বান করা হয়েছে।
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত ছওয়াব বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে যে কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করেছে তা হলো- কুরআন। কুরআন কয়েকটি পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
আল-কুরআন সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজ বা সুরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- বরং এটা মহান কুরআন, সুরক্ষিত ফলকে সংরক্ষিত (সুরা-আল-বুরুজ: ২১-২২)। তারপর আল্লাহ তায়ালা লাওহে মাহফুজ থেকে কুরআন অবতরণের সূচনা করেন। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মহানবি (স) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাবস্থায় মহান আল্লাহর নির্দেশে জিবরাইল (আ) আল-কুরআনের সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নিয়ে মহানবি (স) এর কাছে অবতরণ করেন। সে সময় জিবরাইল (আ) মহানবি (স)কে বললেন, পড়ুন। তিনি বললেন, আমিতো পড়তে জানি না। নবি (স) বলেন, জিবরাইল (আ) আমাকে চেপে ধরলেন, তারপর ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন, পড়ুন আপনার প্রভুর নামে-যিনি মানুষকে জমাট বাঁধা রক্ত হতে সৃষ্টি করেছেন (সহিহ বুখারি)। সাইদ বিন জুবায়ের (রা.) আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) ও ইকরামা বিন আব্দুল্লাহ (র) বলেন, "লাওহে মাহফুজ থেকে সমগ্র কুরআন কোনো এক কদরের রাতে পৃথিবীর আকাশের 'বায়তুল ইযযাহ' নামক স্থানে নাজিল হয়। বায়তুল ইযযাহ হলো বায়তুল মামুরের অপর নাম। এটি বায়তুল্লাহ বরাবর পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতগৃহ। আল্লাহ বলেন, সুনিশ্চিতভাবেই এ কুরআনকে আমি কদর রাতে নাজিল করেছি (সুরা কদর: ১)। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযি (র) বলেন, 'লাওহে মাহফুজ থেকে কুরআন মাজিদ বায়তুল ইযযাতে নাজিল হয়েছে ঠিকই কিন্তু সমগ্র কুরআন নয়। বরং প্রতি বছরের কদর রাতে সে বছরের জন্য প্রয়োজনীয় অংশই কেবল পৃথিবীর আকাশে নাজিল হতো' (আ-তিবইয়ান ফি উলুমিল কুরআন)।
ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত সফলতার শর্ত হিসেবে মুত্তাকির গুণাবলি অত্যন্ত কার্যকর।
মুত্তাকি হলো সেই ব্যক্তি, যার মধ্যে তাকওয়া অর্থাৎ খোদাভীতি ও পরহেজগারিতা আছে। মুত্তাকিরা গায়েবে ইমান পোষণ করে। পাশাপাশি ফেরেশতা, বেহেশত, দোজখ, হাশর, পুলসিরাত, আরশ, তাকদির প্রভৃতি বিষয়ের সত্যতায় বিশ্বাস করে। তারা আল্লাহ প্রদত্ত সকল হুকুম-আহকাম পালন করে। নিজে যথাযথভাবে সালাত আদায় করে এবং সমাজে সালাত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায় এবং আল্লাহ তায়ালা যে জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকির পরিচয় প্রদান করে সুরা বাকারার ৩নং আয়াতে বলেন, (মুত্তাকি তারাই) যারা অদৃশ্যে ইমান আনে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদেরকে জীবিকা হিসেবে আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সুরা বাকারায় বর্ণিত মুত্তাকির বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মধ্যে ধারণ করতে পারলে জীবনে সফল হওয়া যাবে।