উদ্দীপকঃ- মুমিন নিম্নের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করল-
يَأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ وَالَّذِينَ مِنْ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوْ لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ.
ক. রব অর্থ কী?
খ. ইবাদত কাকে বলে ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আয়াতগুলোর আলোকে আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আয়াতটির অনুবাদ কর।
উত্তরঃ-
ক) রব অর্থ প্রভু, প্রতিপালক।
খ) ইবাদত বলতে মহান আল্লাহ যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়। ইবাদত শব্দের অর্থ দাসত্ব করা, গোলামি করা, আনুগত্য করা, নিঃশর্তভাবে কারো আদেশ নিষেধ মেনে চলা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই হলো ইবাদতের একমাত্র লক্ষ্য। সেজন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশিত যেকোনো উত্তম কাজই ইবাদত। যেটি মহান আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (স) এর নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করাটা ব্যাপক বিবেচনায় ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
গ) মুমিনের পঠিত আয়াতে মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিভিন্ন নিয়ামত সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।আলোচ্য আয়াতটি সুরা বাকারার ২২নং আয়াত। এ আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে দেওয়া তাঁর নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং এ পৃথিবীতে তাদেরকে তাঁর খলিফা (প্রতিনিধি) মনোনীত করেছেন। পৃথিবীতে বসবাসকালীন মানুষের জীবন সুন্দর ও আনন্দময় করার জন্য আল্লাহ বিভিন্ন নিয়ামত প্রদান করেছেন। মুমিন উল্লিখিত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পানি, মেঘমালা, ফসল প্রভৃতি আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। এ পৃথিবীকে তিনি মানুষের বসবাস উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি সহজ হয়। তাছাড়া আলো-বাতাস, বৃষ্টি, ফুল-ফসল প্রভৃতি মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের কর্তব্য হলো এসব নিয়ামত ভোগ করে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা। উল্লেখিত আয়াত দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
ঘ) উদ্দীপকে মুমিনের তিলাওয়াতকৃত আয়াতের অনুবাদ হলো-হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করে। যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পূর্ববর্তীদের। যেন তোমরা তাকওয়াবান তথা পরহেজগার হতে পার।যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা আর আকাশকে করেছেন ছাদ স্বরূপ এবং তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। তারপর সে পানি দিয়ে উৎপাদন করেছেন ফল-ফসল যা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ, আর জেনেশুনে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করো না।
উদ্দীপকঃ- ড. জাফর সাদিক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বললেন, আমরা মুসলিম, আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলামের মূল উৎস আল কুরআন। আল কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে সে আলোকে জীবন গড়তে পারলে ইহকাল ও পরকালে শান্তি ও মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে সমাজে যত সমস্যা দেখা যাচ্ছে তার মূলে রয়েছে আল কুরআনের জ্ঞানের অভাব। তাই অনেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও সত্যিকার মানুষ হচ্ছে না। আর এরাই দুর্নীতি করে যা দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক. ইসলাম শব্দের অর্থ কী?
খ. "ইসলামের মূল উৎস কুরআন" বুঝিয়ে লেখ।
গ. প্রধান অতিথির ভাষ্যমতে কীভাবে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ড. জাফর সাদিক যা অর্জনের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ-
ক) ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি।
খ) মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকায় আল-কুরআনকে ইসলামের মূল উৎস বলা হয়।মানবজীবনের সব সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান গ্রন্থ হলো আল কুরআন। এ গ্রন্থটি আগত-অনাগত, সব মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের জীবনের এমন কোনো প্রসঙ্গ, দিক ও বিষয় নেই, যা আল কুরআনে উপস্থাপন করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সুরা আনআমের ৩৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'এ কিতাবে আমি কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করা বাকি রাখিনি।'
গ) প্রধান অতিথির ভাষ্যমতে আল কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যায়।মানবচরিত্র গঠনের উত্তম হাতিয়ার আল কুরআন। একজন মানুষকে উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় সব বিষয় কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। মানুষ কীভাবে খারাপ ও অসুন্দরের পথ থেকে সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে পারে, আল কুরআন সে নির্দেশনা প্রদান করেছে। প্রধান অতিথির ভাষ্যমতে এসব নির্দেশনা উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।উদ্দীফকের ড. জাফর সাদিক বলেন- ইসলামের মূল উৎস হলো কুরআন। আল কুরআনের জ্ঞানার্জন করে সে আলোকে জীবন গড়তে পারলে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আমাদের আল কুরআনের সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন। কারণ কুরআনে বলা হয়েছে- 'তোমরা আল্লাহর রঙে রঙিন হও' (সুরা আল বাকারা-১৩৮)। আর আল্লাহর রঙে রঙিন (এখানে রং বলতে আল্লাহর গুণাবলি ও ইসলামকে বোঝানো হয়েছে।) হতে হলে মানুষকে যাবতীয় অন্যায় কাজ পরিহার করে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। মানুষকে নৈতিক স্খলন ও নীতিহীনতা থেকে রক্ষার জন্য কুরআনে সব ধরনের পাপাচার পরিহার করার নিদেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে- 'কুরআন মানুষের জন্য হেদায়েত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী' (সুরা বাকারা-১৮৫)। সুতরাং কুরআনে বর্ণিত এসব বিষয় আমাদের চরিত্র গঠন ও ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম নির্দেশনা প্রদান করবে। তাই ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের আল- কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে।
ঘ) ড. জাফর সাদিক কুরআনের জ্ঞান অর্জনের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন।মানবজীবনের সব সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান গ্রন্থ হলো আল কুরআন। এ গ্রন্থটি আগত-অনাগত, সব মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের জীবনের এমন কোনো প্রসঙ্গ, দিক ও বিষয় নেই, যা আল কুরআনে উপস্থাপন করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সুরা আনআমের ৩৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'এ কিতাবে আমি কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করা বাকি রাখিনি।' এ জন্য ড. জাফর সাদিক কুরআনের জ্ঞানার্জনের কথা বলেছেন।উদ্দীপকের ড. জাফর সাদিক বলেন- ইসলামের মূল উৎস হলো কুরআন। আল কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে সে আলোকে জীবন গড়তে পারলে ইহকালে ও পরকালে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 'তারা কী কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না' (সুরা আন নিসা: ৮২)। সবরকমের জাগতিক, বৈষয়িক ও ধর্মীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস আল- কুরআন। এ মহাগ্রন্থে ব্যাকরণ, আইন, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, দর্শন, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, সাহিত্য, তর্কশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, ফারাইজ (সম্পদ বণ্টনশাস্ত্র), বর্ষপঞ্জীসহ জীবনঘনিষ্ঠ সব প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে।সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় ড. জাফর সাদিক কুরআনের জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন। যার মাধ্যমে আমরা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে মুক্তি পেতে পারি।