উদ্দীপকঃ-
=> এ্যাডভোকেট সালামত সাজিদ বিভিন্ন মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি আল কুরআনের আইন সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। এজন্য কুরআনে বর্ণিত ব্যাবহারিক আইন, ক্রয়-বিক্রয়, পারিবারিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি বিষয়ে তিনি জ্ঞান অর্জন করতে চান। অপরদিকে তার ভাই কেরামত সাজিদ কুরআন থেকে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, উন্নত চরিত্র গঠন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে চান। এজন্য তিনি কুরআনের কিছু সুরা অধ্যয়নকে যথোপযুক্ত বলে মনে করেন।
প্রশ্ন-
ক. বাকারা অর্থ কী?
খ. কুরআন অবতীর্ণের ২টি পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
গ. সালামত সাজিদ কুরআনের কোন সুরা গুলো অধ্যয়ন করলে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন? বর্ণনা করো।
ঘ. কেরামত সাজিদ পবিত্র কুরআনের কোন সুরাগুলো অধ্যয়ন করলে বর্ণিত বিষয়ের সঠিক ধারণা পাবেন? যৌক্তিকতা তুলে ধরো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) বাকারা অর্থ গাভী।
খ) রাসুল (স) এর ওপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে কুরআন অবর্তীর্ণ হতো। তার মধ্য থেকে দুটি পদ্ধতি নিম্নরূপ।
(১) স্বপ্নযোগে: নবি করিম (স) স্বপ্নযোগে ওহি লাভ করতেন। রাসুল (স) এর কাছে প্রথম ওহির সূচনা হয়েছিল ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে।
(২) মানুষের বেশে: জিরাইল (আ) মানুষের বেশে আগমন করে রাসুল (স) এর কাছে ওহি নিয়ে আসতেন। এ সময় তিনি বেশির ভাগ সাহাবি দাহিয়া কালবী এর আকৃতি ধারণ করতেন।
গ) সালামত সাজিদ কুরআনের মাদানি সুরাগুলো অধ্যায়ন করার মাধ্যমে ইসলামি আইন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
রাসুল (স) এর হিজরতের পরবর্তী সুরাগুলোই মাদানি সুরা। এ সুরাগুলোতে দেখা যায় ইসলামের ব্যাবহারিক আইন, ক্রয়-বিক্রয়, পারিবারিক, সামাজিক ও ইসলামি রীতিনীতির বর্ণনা রয়েছে। যার মাধ্যমে ইসলামি আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা যায়। যা সালামত সাজিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। উদ্দীপকের সালামাত সাজিদ একজন আইনজীবী। তিনি প্রচলিত আইনের পাশাপাশি কুরআনে বর্ণিত ইসলামি আইন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে চান। যা মাদানি সুরাগুলোতে আলোচিত হয়েছে। মাদানি সুরাগুলো হলো বিশ্বাস বা ইমান আনার পর আমলের দিক। এ জন্যই আমরা মাদানি সুরার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দেখতে পাই এসব সুরায় ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া আহকামে শরিয়া, হালাল, হারাম ও ইসলামি রীতিনীতিরও বিশদ বর্ণনা রয়েছে এখানে। ইসলামের ব্যাবহারিক আইন, বিবাহ, ক্রয়- বিক্রয় ও সামাজিক মেলামেশার রীতিনীতির বর্ণনা, ইসলামের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নীতি, আদর্শ পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে এ সুরাসমূহে। দৈনন্দিন লেনদেন, উত্তরাধিকার আইন, যুদ্ধনীতি, জিহাদ ইত্যাদির বর্ণনা। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় সালামাত সাজিদ কুরআনের মাদানি সুরাগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে ইসলামি আইনকানুন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ঘ) কেরামত সাজিদ পবিত্র কুরআনের মক্কি সুরাগুলো অধ্যয়ন করলে তাওহিদ, রিসালাত প্রভৃতি বিষয়ের সঠিক ধারণা লাভ করতে পারবেন। সাধারণত মহানবি (স) এর মদিনায় হিজরতের পূর্বে যেসব সুরা নাজিল হয়েছে সেগুলো মক্কি সুরা। যেহেতু মক্কি সুরাগুলো ইসলামের প্রথম দিকের সুরা, তাই এখানে মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে ইমান ও তাওহিদের দিকে। মানুষকে পরিচিত করা হয়েছে শিরক ও কুফর সম্পর্কে। তাদের অবহিত করা হয়েছে আখিরাত, কবর, হাশর, জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে। যা কেরামত সাজিদের বর্ণিত বিষয়গুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের কেরামত সাজিদ কুরআন থেকে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত উন্নত চরিত্র গঠন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতে চান। যা মক্কি সুরাগুলোতে বিদ্যমান। মক্কি সুরাগুলো অধ্যয়ন করলে তিনি জানতে পারবেন তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, শিরক ও কুফরের অসারতা, দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করে উন্নত চরিত্র গঠন, কিয়ামত ও - হাশর, জান্নাতের সীমাহীন সুখ এবং জাহান্নামের ভীষণ দুর্ভোগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সুরাসমূহে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভ এবং জান্নাত প্রাপ্তির উপায়সমূহ, আখিরাতের বিচারব্যবস্থা, হিসাব-নিকাশ ও পেশ পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর এসবই হচ্ছে একজন মানুষের আকিদা বা বিশ্বাসের দিক, যা মক্কি সুরার বৈশিষ্ট্য। তাই বলা যায়, কেরামত সাজিদ কুরআনের মক্কি সুরাগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তার বর্ণিত বিষয়ের ধারণা লাভ করবেন।