উদ্দীপকঃ-
=> (ক)মুহাম্মদ বিন কাসিম,
(খ) সুলতান মাহমুদ,
(গ)-?
(i) গুজরাট অভিযান,
(ii) পাঞ্জাব অধিকার,
(iii)-?
(iv)-?
প্রশ্নঃ-
ক. আব্বাসি খলিফার কাছ থেকে সুলতান-ই-আজম উপাধি কে গ্রহণ করেন?
খ. বলবন "রক্তপাত ও কঠোর" নীতি গ্রহণ করেছিলেন কেন?
গ. প্রদত্ত ছকে 'গ' চিহ্নিত স্থানে কোন মুসলিম শাসককে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় (iii) ও (iv) নং স্থানে নির্দেশিত বিষয় কতটুকু ভূমিকা রেখেছিল? মূল্যায়ন কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) আব্বাসি খলিফার কাছ থেকে সুলতান ইলতুৎমিশ সুলতান-ই-আজম উপাধি গ্রহণ করেন।
খ) অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়ে তুর্কি অভিজাতদের ষড়যন্ত্র এবং বহিরাক্রমণ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সুলতান বলবন ষড়যন্ত্রপরায়ণ অভিজাতদের দমনের জন্য কঠোর শাসন নীতি গ্রহণ করেন। তাছাড়া মোজালদের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যও তিনি কঠিন দৃঢ়তার পরিচয় দেন। সুতরাং অভ্যন্তরীণ কলহ ও শত্রু দমনের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।
গ) প্রদত্ত ছকে 'গ' চিহ্নিত স্থানটি মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরীকে নির্দেশ করে।
ছকের 'ক' ও 'খ' স্থানে নির্দেশিত যথাক্রমে মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং সুলতান মাহমুদের পর মুহাম্মদ ঘুরীই ভারতবর্ষে অভিযান প্রেরণ করেন। ঘুর রাজ্যের অধিপতি আলাউদ্দিন হুসেনের মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ বিন সাম বা মুহাম্মদ ঘুরীকে গজনির শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঘুর রাজ্যের অধিপতিরূপে ভারতবর্ষে স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।সাম্রাজ্যে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে মুহাম্মদ ঘুরী ১১৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মূলতান ও উচ জয় করেন। ১১৭৯ এবং ১১৮২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু জয় করেন। মুহাম্মদ ঘুরী ১১৭৮ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাট আক্রমণ করেন। গুজরাটের রাজা দ্বিতীয় ভীমের নিকট ঘুরী পরাজিত হন। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে পৃথ্বিরাজের (চৌহান রাজা) সাথে মুহাম্মদ ঘুরী তরাইন প্রান্তরে প্রথম যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেন। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী পুনরায় তরাইন প্রান্তরে পৃথ্বিরাজের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেন এবং পৃথ্বিরাজ যুদ্ধে নিহত হন। এ যুদ্ধে মুসলমানদের জয়লাভের ফলেই ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। তিনিই ভারতে প্রথম মুসলিম স্থাপত্যের সূচনা করেন। তার সুযোগ্য সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেকের সময়ে নির্মিত দিল্লির 'কুয়াতুল ইসলাম' ও আজমিরের 'আড়াই দিনকা ঝোপড়া' মসজিদ দুটি ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্যরীতির অভিনব সৃষ্টি। ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ও বিকাশ সাধন ভারতবর্ষে ঘুরীর রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অভিনব মাত্রা সংযোজন করেছে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি অসংখ্য প্রশিক্ষিত মেধাবী ক্রীতদাস (কুতুবউদ্দিন আইবেক, বখতিয়ার খলজি প্রমুখ) রেখে গিয়েছিলেন যারা তার সাম্রাজ্যকে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত করেছে।
ঘ) ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার (iii) ও (iv) নং স্থানে নির্দেশিত তরাইনের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে তরাইনের প্রথম এবং দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব অপরীসিম। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরী জয়লাভ করতে পারেনি ঠিকই তবে এ পরাজয়ের গ্লানি তাকে ভারতবর্ষ জয়ে আরো উদ্বুদ্ধ করে। যার ফলে তিনি ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং এর মাধ্যমে ভারতে মুসলিম শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
তরাইনের প্রথম এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরী পরাজিত হয়। এ পরাজয়ের মানি মুছে ফেলার জন্য তিনি অদম্য মনোবল নিয়ে দ্বিতীয় বছর ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পুনরায় পৃথ্বিরাজ্যের সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর কাছে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনী পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রায় দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এরপর থেকে হিন্দুগণ আর মুসলিম আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধকে চূড়ান্ত মীমাংসাত্মক যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা যায়। কারণ এটা হিন্দু স্থানের ওপর মুসলিম আধিপত্যের চরম সাফল্যের সূচনা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তরাইনের এ বিজয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ভিত্তি রচনা করেছিল। ঐতিহাসিক ডব্লিউ হেগ বলেন, তরাইনের বিজয়ে উত্তর ভারত পর্যন্ত সব শহরের ফটক মুহাম্মদ ঘুরীর জন্য উন্মোচিত হয়ে পড়ে। পরিশেষে বলা যায় যে, তরাইনের প্রথম এবং দ্বিতীয় যুদ্ধের ভূমিকা ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।