উদ্দীপকঃ-
উদ্ধৃত হাদিসটি পড় এবং নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
التَّاجِرُ الْأَمِينُ الصَّدُوقُ الْمُسْلِمُ مَعَ الشُّهَدَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُسْتَدْرَكَ ال
الْحَاكِمِ.
ক. التاجر শব্দটি অর্থ কী?
খ. সিহাহ সিত্তাহ বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে উদ্ধৃত হাদিসটির শিক্ষণীয় বিষয় উল্লেখ কর।
ঘ. উদ্দীপকের উদ্বৃত হাদিসটির বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ-
খ) সিহাহ সিত্তাহ বলতে বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিস গ্রন্থকে বোঝায়। হিজরি তৃতীয় শতকে হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগে হাদিস সংকলনের ক্ষেত্রে ছয়জন মুহাদ্দিস এবং তাদের সংকলিত গ্রন্থ বিশেষ প্রাধান্য পায়। এগুলো সর্বজনীন ও সর্বাঙ্গীন বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি লাভ করে। ইলমে হাদিসের পরিভাষায় তাদের সংকলিত বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিস গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। এগুলো হলো- সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযি, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবন মাজাহ ও সুনানে আবু দাউদ। হাদিস সংকলকদের নাম অনুযায়ী উক্ত হাদিস গ্রন্থগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
গ) আলোচ্য হাদিসে ব্যবসায়ীর সৎ ও বিশ্বস্ত থাকার গুণ দুটির কথা বলা হয়েছে।ব্যবসা জীবিকা উপার্জনের একটি হালাল পদ্ধতি। সৎ ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করার মাধ্যমে সৎ ব্যবসায়ীগণ কিয়ামতের দিন শহিদদের সাথে অবস্থান করবেন। উদ্দীপকে উক্ত হাদিসে এ বিষয়টিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।মহানবি (স) এর বৈষয়িক ও পারলৌকিক জীবনের নীতি নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ এ হাদিসের শিক্ষা হলো, সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে হবে। ব্যবসায়ে মানুষের সাথে প্রতারণার বিপুল সুযোগ থাকে। ধোঁকা ও শঠতার মাধ্যমে এখানে লাভবান হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স) মানুষের এ দুর্বলতা দূর করতে চান। তিনি এজন্যই ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা ও বিশ্বস্ততাকে আল্লাহর পথে জিহাদ করে শাহাদাত লাভের সমান মর্যাদা দিয়েছেন। মুসলিম ব্যবসায়ী পণ্য উৎপাদন বিপণন ও ভোক্তার নিকট অর্পনের প্রতিটি পর্যায়ে সৎ থাকবেন। ব্যবসার উদ্দেশ্য থাকতে হবে সামাজিক কল্যাণময়তা ও পরকালীন বিপুল মর্যাদা। হাদিসের এসব শিক্ষার আলোকে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।সুতরাং, মুসলিম ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব হলো সততা ও বিশ্বস্ততা রক্ষা করা, ন্যায় ও বৈধপথে অবিচল থাকা। তাহলেই তার জন্য অপেক্ষা করবে নিশ্চিত সাফল্য ও মহাপুরস্কার।
ঘ) উদ্দীপকে উদ্ধৃত হাদিসটির বিষয়বস্তু হলো ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ ও বিশ্বস্ত থাকা।ব্যবসা মানুষের জীবিকা উপার্জনের একটি হালাল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতারণা করার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি সততা ও বিশ্বস্ততা বজায় রাখার সুযোগও রয়েছে। কিন্তু যে ব্যবসায়ী এ প্রতারণা থেকে বেঁচে থেকে সততার সাথে ব্যবসা করতে পারে তার জন্য পরকালে আকর্ষণীয় পুরষ্কার রয়েছে। উক্ত হাদিসে এ বিষয়টির কথা বলা হয়েছে।মহানবি (স) বলেছেন, বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহিদদের সাথে অবস্থান করবে, (মুসতাদরাক হাকিম)। দ্রব্য সঠিক দেওয়া এবং তার মান ঠিক রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ী অসৎ হলে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রকম ক্ষতির মধ্যে পড়তে বাধ্য। বর্তমান সময় হলে প্রতারণা, মজুতদারি, ও সুদি কারবারের যুগ। এ যুগেও এসব অসৎ পথ থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামি বিধিবিধানের আলোকে ব্যবসা করতে হবে।সুতরাং মানবিক ও সামাজিক স্বার্থে পরকালীন বিপুল মর্যাদার কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হলো সৎ ও বিশ্বস্ত থেকে ব্যবসা পরিচালনা করা।
উদ্দীপকঃ-
দৃশ্যকল্প-১: হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসুল (স) ইদুল ফিতরের দিন অন্তত কয়েকটি খুরমা না খেয়ে বের হতেন না এবং তিনি বেজোড় সংখ্যায় খুরমা খেতেন।
দৃশ্যকল্প-২: সুলাইমান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাস্ত্রে মাস্টার্সের ছাত্র। যেটিতে সে আল-কুরআনের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারছে। সুলাইমান বিষয়টি পড়াশোনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, 'এটি ব্যতীত কুরআনের উপর আমল করা সম্ভব নয়'।
ক. হাদিসে মুতাওয়াতির বলতে কী বোঝ
খ. 'তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে আমার অনুসরণ কর'- আয়াতটির ব্যাখ্যা কর।
গ. দৃশ্যকল্প-১: হাদিসটি কোন প্রকারের হাদিস? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুলাইমানের সিদ্ধান্তটি কতটা যৌক্তিক? শাস্ত্রটি চিহ্নিতপূর্বক বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ-
ক) যে হাদিসের বর্ণনাকারীদের সংখ্যা প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক স্তরে এত অধিক যে, তাদের সবার পক্ষে একযোগে মিথ্যার ওপর ঐকমত্য পোষণ অসম্ভব; এরূপ হাদিসই মুতাওয়াতির হাদিস।
খ) পার্থিব ও পরকালীন পূর্ণ সফলতার জন্য মহানবি (স) কে অনুসরণ ও ভালোবাসতে হবে- আলোচ্য আয়াতে একথাই বোঝানো হয়েছে। মাতাপিতা, সন্তান, স্ত্রী, পরিজন, আত্মীয়স্বজন এবং পার্থিব কোনো বিষয় বা বস্তুই রাসুল (স)-এর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পেতে পারে না। আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পেতে হলে প্রথম শর্তই হলো রাসুল (স)কে অনুসরণ ও ভালোবাসা। মুমিনের কর্তব্য হলো রাসুল প্রেমের ওপর অন্য কিছু বা কাউকে প্রাধান্য না দেওয়া। এছাড়া পার্থিব ও পরকালীন পূর্ণ সাফল্য লাভের জন্য এবং ইমানের পূর্ণতা সাধনের জন্য ব্যক্তির রাসুল (স) এর সর্বোচ্চ অনুসরণ ও প্রেমের কোনো বিকল্প নেই।
গ) দৃশ্যকল্প-১ এর হাদিসটি ফিলি হাদিস।ফিলি অর্থ কর্মমূলক। যে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স) এর কোনো কাজ বা তৎপরতার বিবরণ স্থান পেয়েছে তাকে ফি'লি হাদিস বলে। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ এরই প্রকাশ পেয়েছে।দৃশ্যকল্প-১-এ রাসুল (স) ঈদুল ফিতরের সকালবেলা যে খুরমা খেতেন সেটির বিবরণ এসেছে। আর এরূপ বর্ণনাকৃত হাদিস ফি'লি নামে পরিচিত। বস্তুত রাসুলুল্লাহ (স) আল্লাহর দীন মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কথা বলতেন, নানা বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন এবং বক্তৃতা ও আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরতেন। আবার লোকজনের সাথে সাধারণ বাক্য বিনিময়ও করতেন। তাঁর এসব কিছুই হাদিস। আবার নবিজি (স) সাহাবিদেরকে কোনো বিষয় পবিত্র মুখ দিয়ে ব্যাখ্যা না করে তাঁর জীবনে ইসলামের সব বিধান পালন, লোকদের সাথে লেনদেন এবং প্রয়োজনীয় বৈষয়িক কাজ সম্পাদন করেছেন- এগুলোও হাদিস। আর উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ এ ধরনের হাদিস তথা ফি'লি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
ঘ) হাদিস ব্যতীত কুরআনের ওপর আমল করা অসম্ভব- সুলাইমানের এ সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি যৌক্তিক।হাদিস ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। ইসলামি পরিভাষায় মহানবি (স) এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে হাদিস বলে। হাদিস ও কুরআন মাজিদের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। উদ্দীপকে এটাই ফুটে উঠেছে।উদ্দীপকের সুলাইমান হাদিসের মাধ্যমে আল কুরআনের ব্যাখ্যা জানতে পারে। তার মতে হাদিস ব্যতীত কুরআন বোঝা অসম্ভব। বস্তুত কুরআনের পর সকল প্রকার জ্ঞানের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত তথ্য ও তত্ত্বসমৃদ্ধ জ্ঞান হলো হাদিস। কুরআনে যে বিষয়ের বর্ণনা হয়েছে হাদিসে সে বিষয়েরই বিস্তৃত বর্ণনা স্থান পেয়েছে। হাদিস কুরআন মজিদের ব্যাখ্যা ও বাস্তব রূপ। যে জন্য হাদিস ছাড়া আল কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। আবার কুরআনকে বাদ দিয়ে হাদিসেরও নিজস্ব কোনো মূল্য নেই। তাই হাদিস ও কুরআন পরস্পর নির্ভরশীল সম্পর্কে গ্রথিত। এছাড়াও কুরআন মাজিদ ও হাদিসে প্রবর্তিত বিধানাবলির মধ্যেও রয়েছে চমৎকার মিল। কুরআন যে বিষয়কে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছে হাদিস তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। উদাহরণস্বরূপ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। কুরআনে সালাতের সুনির্দিষ্ট সময়সূচির উল্লেখ নেই। হাদিসে রাসুল (স) সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অতএব, উপরের আলোচনায় একথা প্রতিয়মান যে, হাদিস ছাড়া কুরআন বোঝা বা আমল করা অসম্ভব বলে সুলাইমানের সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত।