প্রশ্ন- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পড়ে জানতে পারে যে, তুঘলক বংশের একজন শাসনকর্তা শাসনকার্যের সুবিধার জন্য কিছু উচ্চাভিলাষী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ লক্ষে উক্ত শাসক রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। বিদ্রোহীদের দমন করতে খোরাসান, কারাচিলে (চীন) অভিযান প্রেরণ এবং তাম্রমুদ্রার প্রচলন, কর বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হন। বস্তুত দিল্লির সুলতানের মধ্যে তিনি সর্বাধিক বিদ্বান ও গুণসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।
ক. কুতুবমিনার কোথায় অবস্থিত?
খ. প্রতীকী তাম্রমুদ্রা প্রবর্তন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে 'S' ভারতের ইতিহাসের কোন শাসনকর্তা সম্পর্কে জানতে পারেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত শাসনকর্তার গৃহীত মহাপরিকল্পনাসমূহ দিল্লির সালতানাতে কতটুকু প্রভাব ফেলেছিল? মতামত দাও।
উত্তর-
ক) কুতুবমিনার দিল্লিতে অবস্থিত।
খ) সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক প্রচলিত সোনা ও রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে যে নতুন মুদ্রা প্রচলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটিই তাম্রমুদ্রা প্রচলন পরিকল্পনা নামে পরিচিত।মুহাম্মদ বিন তুঘলক তার রাজকোষের ঘাটতি দূর করা, চতুর্দশ শতকে ভারতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের অভাব, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি এবং লেনদেন ও বিনিময় সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে প্রতীকী তাম্রমুদ্রার প্রচলন করেন। তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার ন্যায় তাম্রমুদ্রাকেও বিনিয়োগ প্রতীকী মুদ্রা বলে ঘোষণা করেন। তবে প্রতীকী তাম্রমুদ্রা প্রবর্তনের ফলাফল ছিল মারাত্মক। এ ব্যবস্থায় জনগণ প্রচুর জালমুদ্রা তৈরি করে সেগুলো দিয়ে রাজস্ব পরিশোধ করতে থাকে। ফলে মুদ্রার মান কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
গ) উদ্দীপকের 'S' প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উচ্চাভিলাষী শাসনকর্তা মুহাম্মদ বিন তুঘলক সম্পর্কে জানতে পারেন।উদ্দীপকের 'S' ইতিহাস অধ্যয়ন করে একজন তুঘলক শাসকের কিছু উচ্চাভিলাষী মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারেন। উক্ত শাসক শাসনকার্যের সুবিধার জন্য রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। তাছাড়া তিনি বিদ্রোহ দমনে অভিযান প্রেরণ করেন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন। এ সকল তথ্য মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসননীতির সাথে সম্পর্কিত।মুহাম্মদ বিন তুঘলক প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করেই রাজধানী দেবগিরিতে স্থানান্তর করেছিলেন। দেবগিরিকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে পরিবার-পরিজন, আমির-ওমরাহ, অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এবং দিল্লির জনগণসহ দেবগিরিতে গমন করেন। তিনি রাজ্যবিস্তারের উদ্দেশ্যে খোরাসান ও কারাচিলে অভিযান পরিচালনা করেন। তার এ দুটি অভিযানই ছিল অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। তাছাড়া সুলতান অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে প্রতীকী তাম্রমুদ্রা প্রবর্তন করেন। অবশ্য প্রতীকী তাম্রমুদ্রা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি; বরং এর ফলে মুদ্রার মান কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলক দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন। সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং শাসনব্যবস্থাকে সুগঠিত ও কার্যক্ষম করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানই ছিল এই কর বৃদ্ধির কারণ। উদ্দীপকে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের এ কার্যক্রমগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ) দিল্লি সালতানাত পতনের জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক গৃহীত মহাপরিকল্পনাসমূহ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল।মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অপরিকল্পিত উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ এবং সাম্রাজ্য শাসনে অক্ষমতা দিল্লি সালতানাতের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতা ও শিথিলতার সুযোগে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অরাজকতা ও বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং সালতানাতের ঐক্যবিরোধী শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে ওঠে। এসময়ে ক্রমাগতভাবে সালতানাতের সীমানা সংকুচিত হয়ে পড়ে। চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সালতানাতের পতনোন্মুখতা পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের গৃহীত উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে অধিকাংশের মতে, এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় বিভিন্ন কারণেই, যেমন দিল্লির জনগণ নতুন পরিবেশে ও দেবগিরির আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি, দিল্লির মুসলমানদের হিন্দু অধ্যুষিত দেবগিরিতে বসবাসে অসম্মতি ছিল এবং মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কায় উত্তর ভারতে সুলতানের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা এবং তদাঞ্চলে সুলতানের আধিপত্যের শিথিলতা। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মোরল্যান্ডের বলেন, তার কার্যসমূহ ছিল একটি অসংগতির স্তূপ।নিরপেক্ষ বিচারে দিল্লি সালতানাতের পতনের জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলককে বিশেষভাবে দায়ী করা অনৈতিহাসিক প্রচেষ্টা বলে মনে হয়। কেননা তার রাজত্বকালে বিভিন্ন বিদ্রোহ সংঘটিত হয় সত্য, তবে প্রজাসাধারণ তার প্রতি পুরোপুরি বিরূপ ছিল তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।