উদ্দীপকঃ-
=> মাওলানা জামালউদ্দীন জুমআর খুতবায় মুসল্লিগণের আমল সংশোধনের উদ্দেশ্যে বললেন যে, আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে যাদের কথা ও কাজের সাথে মিল নেই। এরা আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত অর্জন করছে। তাই এদের মত অভ্যাস ত্যাগ করা উচিৎ। জনৈক মুসল্লী মাওলানা সাহেবের নিকট জানতে চান যে, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম উপায় কি? উত্তরে তিনি বললেন যে, এমন একটি গ্রন্থ রয়েছে যা পাঠ করলে অন্তরের মরিচিকা দূর হয়। তাই সেই গ্রন্থটি সর্বদা পাঠ করা ও অনুসরণ করা দরকার।
প্রশ্ন-
ক. খলিফা অর্থ কী?
খ. "আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।"- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মাওলানা জামাল উদ্দীন খুতবায় যে সব লোকের কথা ও কাজের গরমিলের কথা ইঙ্গিত করেছেন তা সুরা বাকারার আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. "এমন একটি গ্রন্থ রয়েছে যা পাঠ করলে অন্তরের মরীচিকা দূর হয়" বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) খলিফা শব্দের বাংলা অর্থ হলো প্রতিনিধি।
খ) আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সবকিছু জানেন।
আল্লাহ তায়লা পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি তথা মানুষ সৃষ্টির কথা ফেরেশতাদের কাছে প্রকাশ করলে জবাবে ফেরেশতারা বলল 'আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে চান যারা সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে বরং আমরাইতো আপনার তাসবিহ পাঠ করি ও পবিত্রতা বর্ণনা করি' তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি যা জানি তোমারা তা জাননা। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা খুব ভাল করে জানেন মানুষ পৃথিবীতে এসে কী করবে।
গ) মাওলানা জামালউদ্দীন খুতবায় যে সব লোকের কথা বলেছেন তারা হলো মুনাফিক। মুনাফিকের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
সুরা আল বাকারার ২০নং আয়াতে মুনাফিকদের করুণ পরিণতির ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।মুনাফিকরা পথভ্রষ্ট ও শঠতাপূর্ণ জীবনযাপন করে। এর ফলে তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয় এবং চিরস্থায়ী ক্ষতিই তাদের প্রাপ্য। তারা পৃথিবীতে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তেমনি পরকালের জীবনেও মহাশাস্তি ভোগ করে। অর্থাৎ তারা চিরস্থায়ী ধ্বংসের মুখে পতিত হয় এবং এর থেকে তাদের কোনো মুক্তি নেই। সুরা আল বাকারার ২০নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের কর্মতৎপরতা ও দুরবস্থার বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করেছেন। এ আয়াতের শিক্ষা এরূপ যে, মুনাফিকরা চরম হতভাগ্য। মুমিনদের সাথে থেকে তাদের মতো বাহ্যিক আচরণ করেও তারা হেদায়েতের পথে চলার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়। পৃথিবীতে তাদের জীবন যেমন অসম্মান ও অবিশ্বাসে ভরা থাকে, পরকালেও তারা কল্পনাতীত যন্ত্রণা ও আজাবে নিমজ্জিত থাকবে। বস্তুত তারা চিরস্থায়ী ধ্বংস ও ক্ষতিতে পতিত হবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মুনাফিকের। এরূপ দুর্ভাগ্যের শিকার হবেন। মিথ্যা ও শঠতার পথ অবলম্বন করায় তারা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবেন।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, মুনাফিকদের শাস্তি কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক। তাই আমাদের উচিত পরিপূর্ণভাবে ইমান আনা এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে জীবনযাপন করা।
ঘ) আল কুরআন পাঠ করলে অন্তরের মরীচিকা দূর হয়।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণের জন্য আল কুরআন অবর্তীণ করেছেন। কুরআন মানুষের জন্য সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনে। এর মাধ্যমে মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। এর তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে মরীচিকা দূর হয়। আর এখানে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। উদ্দীপকের মাওলানা জামালউদ্দীন বলেন, এমন একটি গ্রন্থ রয়েছে যা পাঠ করলে অন্তরের মরীচিকা দূর হয়। তার একথার সমর্থন হাদিসেও পাওয়া যায়। রাসুল (স) বলেন, 'নিশ্চয়ই এ অন্তরেও মরিচা পড়ে, যেমন পানি পড়লে লোহায় মরিচা পড়ে। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসুল এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা' (মিশকাত)। কুরআন তিলাওয়াত করলে অন্তর পরিষ্কার হয় ও অন্তরে নুর পয়দা হয়। আল্লাহর ভয় তৈরি হয়। এর তিলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। অন্তর থেকে গোনাহ করার প্রবণতা কমে যায় এবং গোনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য অন্তরে আগ্রহ তৈরি হয়। সর্বোপরি অন্তরে আল্লাহর প্রতি মুহাব্বত সৃষ্টি হয় যা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সহায়ক। পরিশেষে বলা যায়, কুরআনের তিলাওয়াত অন্তরের মরীচিকা দূর করে।