দৈনন্দিন জীবনে "ভেজাল" একটি আতঙ্ক।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভেজালে আজ মানুষ জর্জরিত। ঘুম জড়ানো চোখে আজ যে চা পান করবেন তা যত দামিই হোক না কেন তার মধ্যে আছে চামড়ার গুঁড়ো অথবা পেঁপের বিচি । বাজারে গেলেই দেখা যাবে লাল রঙে রাঙানো মাছের কানকো। সবজিতে তুঁতে জল, কিংবা বিষাক্ত সবুজ রং মেশানো। দেখলেই মনে হবে কী টাটকা সবজিগুলো। সরষের তেলে ঝাঁঝ আনতে হবে, মেশাও অ্যালাইল, আইসোথায়োসায়ানেট। তেলের রং করতে হবে। ঢালো *বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য*। লঙ্কা গুঁড়োয় ইটের গুঁড়ো, চালে খুদ। খাঁটি গাওয়া ঘিতে থাকে ডালডা, মিষ্টি আলু চূর্ণ, এমনকি চর্বি। পথে ছেলেমেয়েদের হাতে ‘লজেন্স' তুলে দেয়ার অর্থ মেটালিন ইয়োলো, লেড ক্রোমেট প্রভৃতি বিষাক্ত রং খেতে দেয়া। রঙিন মিষ্টির ক্ষেত্রেও তাই। ভেজাল পানীয় দ্রব্যে, ভেজাল বেবিফুডে তো বাজার চেয়ে আছে। ঘুমের বড়ি খাবেন কি? তাতেও ভেজাল । ভেজালের স্তূপে বাস করছি আমরা।ভেজালের কারণটি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক। অর্থের লোভেই বাড়ে ভেজালের মাত্রা, ভেজালের প্রবণতা। চাহিদার তুলনায় যোগান যখন কমে যায়, তখনই আসলের পাশে নকল ও ভেজালের অনুপ্রবেশ ঘটে। ইংরেজ ও পাকিস্তান আমলে তো ঘটে ছিলই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও সে ঘটনার ব্যতিক্রম হয় নি। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা চায় অর্থ। অর্থের ভাঁড়ার বাড়ানোর লোভেই তারা মানুষ মারার কল প্রস্তুত করে চলেছে, ভেজাল দিচ্ছে বস্তুতে। প্রত্যক্ষভাবেই হোক আর পরোক্ষভাবেই হোক এর পেছনে রয়েছে প্রশাসনের মদদ। ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক দল অর্থাৎ শাসক দলের সাথে নিবিড় সংযোগের ফলেই সৃষ্টি হচ্ছে ভেজালদারদের। জনগণের অজ্ঞতা এবং নির্লিপ্ততা তো এর সাথে যুক্ত আছেই।
ভেজালের পরিধি যেভাবে বেড়ে চলেছে তাকে প্রতিরোধ করা একটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু নিশ্চুপভাবে বসে থাকলে চলবে না। সমাজ তথা জাতিকে বাঁচাতে হলে এর প্রতিকার একান্ত আবশ্যক। তাই ভেজালের প্রতিকারের লক্ষ্যে ক্রেতাস্বার্থ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসনের উপর এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে প্রশাসন ভেজাল নিরোধক আইন কার্যকরী বাধ্য হয়। খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য জেলায় জেলায় পরীক্ষাগার খুলতে হবে, ভেজালকারী ধরা পড়লে তাদের এমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে দেশবাসী সকলে চমকে উঠে। সর্বোপরি প্রশাসক এবং সাধারণ ক্রেতার যুগ্ম প্রচেষ্টায় এ ভেজাল নিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। ঔদাসীন্য এবং গড়িমসি অচিরে বন্ধ করে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিনীত,
মোঃ সাইফুল ইসলাম।