প্রশ্ন- "যাহা লিখিবেন, তাহা হঠাৎ ছাপাইবেন না।"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ- প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে নতুন লেখকদের লেখা কিছুদিন ফেলে রেখে সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন কোনো লেখা সম্পূর্ণ করার পর তাতে কিছু ত্রুটি থেকে যেতে পারে। কিন্তু সেই ত্রুটি তাৎক্ষণিক নজরে আসে না। তাই প্রাবন্ধিক কোনো প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস লেখার পর এক-দুই বছর ফেলে রাখতে অর্থাৎ চোখের আড়ালে রাখতে বলেছেন। এক-দুই বছর পর লেখাটির অনেক ত্রুটি নজরে পড়বে। তখন লেখার ত্রুটিগুলো সংশোধন করলে রচনা বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে।
প্রশ্ন- “যে বিষয়ে যাহার অধিকার নাই, সে বিষয়ে তাহার হস্তক্ষেপ অকর্তব্য।"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ- প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক বোঝাতে চেয়েছেন যার যে বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা নেই তার সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।সাময়িক সাহিত্য মূলত ঘটে যাওয়া সমসাময়িক ঘটনা কিংবা বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়। কিন্তু যারা এই সাময়িক সাহিত্য রচনা করেন তাদের অনেকেরই সেসব বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে না। তারা অতিশয় ভাবাবেগে আচ্ছন্ন হয়ে বা আপন খেয়ালের বশে সাহিত্য রচনা করেন। যার ফলে সাহিত্যটি উৎকৃষ্ট মান লাভ করে না। অথবা কিছু সময় পরে তার সাহিত্য মূল্য হারায়। তাই প্রাবন্ধিক মনে করেন, যার যে বিষয়ে দক্ষতা বা অধিকার নেই, তার সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা অকর্তব্য।
প্রশ্ন- "সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা।"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ- সহজ-সরল ভাষাই রচনার শ্রেষ্ঠ অলংকার- এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।লেখকের উদ্দেশ্য থাকে মনের ভাব পাঠকের কাছে পৌছে দেওয়া। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, রচনার ভাষা এত জটিল হয়ে পড়ে যে, পাঠক তা বুঝতে পারেন না। যিনি সোজা কথায় মনের ভাব পাঠককে বোঝাতে পারেন তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক। কারণ লেখার উদ্দেশ্য হলো সরল ভাষায় পাঠককে বোঝানো। তাই রি প্রাবন্ধিক বলেছেন, সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার হলো সরলতা।
প্রশ্ন- "যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও কনা।"- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ- রচনায় কোনোকিছু লিখলে সেটির পেছনে যথাযথ যুক্তি । থাকতে হবে- এটি বোঝাতে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। যেকোনো রচনায় অনেক তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। লেখার মান বৃদ্ধি করার প্রয়োজনে এমনটা করতে হয়। তবে রচনায় যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হবে অর্থাৎ লেখা হবে তার প্রমাণ সবসময় না দিলেও চলে। কিন্তু প্রমাণগুলো হাতে থাকা অনিবার্য। আর যদি কোনো কথার প্রমাণ না থাকে তবে তা লেখা যাবে না। এজন্যই প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন- "বাঙ্গালা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হইতে থাকিবে।" কীভাবে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ- বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন প্রবন্ধে উল্লিখিত নিয়মগুলো মেনে চললে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হতে থাকবে।প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে নতুন লেখকদের প্রতি বিভিন্ন নিয়মের কথা বলেছেন। এই নিয়মগুলোর মধ্যে প্রাবন্ধিক যশ কিংবা টাকার জন্য লিখতে নিষেধ করেছেন। দেশ ও সমাজের মঙ্গল না হলে সেই লেখা বর্জন করতে বলেছেন। অসত্য ও ধর্মবিরুদ্ধ কথা কিংবা লেখার মাধ্যমে পরপীড়ন বা স্বার্থসাধন হয় তেমন লেখা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাছাড়া প্রাবন্ধিক লিখেই প্রকাশ করতে ও বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করতে এবং অলংকার প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টা করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি লেখা বারবার বন্ধুদের পড়ে শোনাতে, সহজ ভাষায় লেখা উপস্থাপন করতে, কাউকে অনুকরণ না করতে এবং প্রমাণহীন কথা লেখায় উপস্থাপন করতে নিষেধ করেছেন। প্রাবন্ধিক মনে করেন এ নিয়মগুলো মেনে চললে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি বেগে হতে থাকবে।