উদ্দীপকঃ-
=> ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে আল হেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্র প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ ইসলামি শিক্ষা বিভাগের অনার্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী জাবিরকে সম্মেলনের জন্য মনোনীত করেন। কিন্তু বিভাগের কয়েকজন ছাত্র এর প্রতিবাদ জানায়। বিভাগীয় প্রধান ক্লাসে উপস্থিত হয়ে হাসিমুখে বোর্ডে তালাক সংক্রান্ত একটি জটিল মাসআলা লিখে তার সমাধান করতে বলেন। তখন কেবল জাবিরই যথাযথ সমাধান করতে সক্ষম হয় এবং প্রতিবাদী ছাত্ররা লজ্জিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। শরিফ নামে অপর একজন ছাত্র পিতা ও দাদার বংশ পরিচয় তুলে ধরে জাবিরকে প্রতিনিধি মেনে নিতে পুরোপুরি অস্বীকার করে। কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। ফলে তার ছাত্রজীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রশ্ন-
ক. কাদেরকে বনি ইসরাইল বলা হয়?
খ. নিম্নের আয়াতটির মর্মার্থ লিখ।
فَتَلَقَّى آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
গ. জাবিরকে গ্রুপ লিডার মনোনীত করার বিষয়টি আল কুরআনের কোন ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শরিফের চরিত্রটি আল কুরআনের আলোকে চিহ্নিতপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিস্কারের যথার্থতা নিরূপণ কর। ৪
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) হযরত ইয়াকুব (আ) এর বংশধরদের বনি ইসরাইল বলা হয়।
খ) প্রশ্নোল্লিখিত আয়াতে হযরত আদম (আ) এর তাওবা কবুলের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টির পর তাঁর সাথে ইবলিসের চিরস্থায়ী শত্রুতার সূচনা হয়। শেষ পর্যন্ত তার ষড়যন্ত্রে নিতান্ত অনিচ্ছায় হযরত আদম (আ) আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে ফেলেন। এরপর আল্লাহ আদম দম্পতিকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। আদম (আ) সীমাহীন লজ্জা ও অনুশোচনায় পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দয়াপরবশ হয়ে আদম (আ) কে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া বাণী ও পদ্ধতিতে অব্যাহত বিনীত প্রার্থনার পর আল্লাহ তায়ালা দয়াপরবশ হয়ে তাঁর তাওবা কবুল করেন।
গ) জাবিরকে সম্মেলনের প্রতিনিধি মনোনীত করার বিষয়টি আল কুরআনে ফেরেশতাদের সম্মুখে আদম (আ) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার যত সৃষ্ট জীব আছে তাদের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে মর্যাদাবান। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানবজাতি প্রেরণের আগে আদম (আ) এর মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। উদ্দীপকে এ বিষয়ের ইঙ্গিত লক্ষণীয়।উদ্দীপকে ওআইসি সম্মেলনে মেধাবী ছাত্র জাবির প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হওয়ায় কতিপয় ছাত্র প্রতিবাদ জানায়। তখন বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক তালাকের মাসআলার সমাধান করানোর মাধ্যমে জাবিরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। অনুরূপভাবে বস্তু ও বিষয়গত জ্ঞানলাভের পর আল্লাহ তায়ালা আদম (আ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের ব্যবস্থা হিসেবে তিনি বিশ্বজাহানের সববস্তু ও বিষয় ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করে তাদেরকে সেগুলোর নাম বলতে বললেন। ফেরেশতাদের পক্ষে এটা বলা সম্ভব ছিল না। কেননা তারা শুধু তা-ই জানে যা তাদের জানানো হয়। তা-ই শেখে, যা শেখানো হয়। সংগত কারণেই তারা অক্ষমতা প্রকাশ করলেন। আল্লাহ তায়ালা আদম (আ)কে সমস্ত সৃষ্টির নাম বলার নির্দেশ দিলেন। তিনি সবকিছুর নাম বলে দেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আদম (আ) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের ঘটনা আর জাবিরের ছাত্র প্রতিনিধি হওয়ার ঘটনা প্রায় একই রকম।
ঘ) আল কুরআনের আলোকে শরিফের চরিত্র ইবলিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ইবলিসের নাম আযাযিল। আল্লামা যামাখশারি (র)-এর মতে, সে ছিল 'জিন'। 'শয়তান' ও 'ইবলিস' হলো আযাযিলের অভিশপ্ত দুইটি উপাধি। শয়তান অর্থ হলো- বাতিল, বিভ্রান্ত বা দূরে সরে যাওয়া সত্তা। আযাযিল সীমাহীন অহঙ্কার ও ভয়ানক অবাধ্যতার জন্য আল্লাহর রহমত। থেকে দূরে সরে গিয়েছিল বলে তাকে শয়তান বলা হয়েছে। উদ্দীপকে ইবলিসের পরিণতির সাথে শরিফের পরিণতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উদ্দীপকে ওআইসি সম্মেলনে জাবির প্রতিনিধি মনোনীত হওয়াতে শরিফ তাকে প্রতিনিধি মেনে নেয়নি। সে তার পিতা ও দাদার বংশ গৌরব করে নিজে প্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ঠিক একইভাবে যখন আদম (আ) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে তাঁকে সিজদা করতে নির্দেশ দেন। ফেরেশতাদের প্রত্যেকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে আদম (আ)কে সিজদা করল। তাদের মধ্যে একজন ছিল ইবলিস। নিজের নিষ্ঠা ও ইবাদতে সে ফেরেশতাদের নেতায় পরিণত হয়েছিল। সে আল্লাহর নির্দেশ পালন করল না। তার ভেতর অহংকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সে নিজেকে আগুনের তৈরি বিবেচনা করে মাটির আদমকে সিজদা করতে অস্বীকার করল। তার অবাধ্যতা ও অহংকার তাকে ধ্বংস করে দিল। আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দা থেকে সে পরিণত হলো অভিশপ্ত শয়তানে। উপরের আলোচনার আলোকে এটা প্রতীয়মান হয় যে আদম (আ)কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে ইবলিসের যেমন ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে শরিফের অত্যন্ত খারাপ পরিণতি হয়েছে।