উদ্দীপকঃ-
=> জনাব তাহির জুমআর খুতবায় পবিত্র কুরআনের এমন একটি সুরার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন, যার বিষয়বস্তু সমূহ হলো, আখিরাত, তাকদির, পুনরুত্থান, কিয়ামত জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি। অপর দিকে জনাব মনসুর শ্রেণি কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে জাতীয়, আন্তর্জাতিক নীতিমালা এবং উত্তরাধিকার সম্বলিত বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট সুরা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রশ্নঃ-
ক. সম্পূর্ণ কুরআন সর্বপ্রথম কোথায় সংরক্ষিত হয়?
খ. পবিত্র আল কুরআনের অর্থসহ পাঁচটি নাম লেখ।
গ. জনাব তাহির জুমআর খুতবায় কোন ধরণের সুরার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন? পাঠ্যবইয়ের আলোকে সেই সুরাগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
ঘ. জনাব মনসুর আলোচিত সুরার যে ধরণের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরসমূহঃ-
ক) কুরআন সর্বপ্রথম লাওহে মাফফুজে সংরক্ষিত হয়।
খ) আল কুরআনের বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি নামঃ-
১. আল ফুরকান বা হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী।
২. আল কিতাব বা স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ।
৩. আল মাওয়িজা বা উপদেশ।
৪. আল হিকমা বা বিজ্ঞানময়।
৫. আল-শিফা বা নিড়াময়।
গ) জনাব তাহির জুমার খুৎবায় মক্কি সুরাসমূহের ব্যাখ্যা দিচ্ছেলেন, যেগুলোর বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সাধারণভাবে মক্কায় নাজিলকৃত সুরাসমূহকে মক্কি সুরা বলা হয়। এ সুরাসমূহে মহান আল্লাহ তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছেন। মানুষের উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমে কীভাবে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করা যায় তার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এসব সুরায়। তাহিরের আলোচনায় এসব সুরার ইঙ্গিত বহন করে।
উদ্দীপকের জনাব তাহির মক্কি সুরার ব্যাখ্যা করছিলেন যাতে আখিরাতে, তাকদীর প্রভৃতি ইমানের মৌলিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে। বস্তুত এসব সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ) বর্ণনার পাশাপাশি আল্লাহর একত্ববাদ অস্বীকারের পরিণতি সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া রিসালাত কী, রিসালাতের দায়িত্ব করা পালন করেছেন, দায়িত্ব পালনের রীতিনীতি সম্পর্কিত নানা বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে মক্কি সুরাসমূহে। আবার আখিরাতের বিচার ব্যবস্থা, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নাম শেষ পরিণতির বর্ণনা রয়েছে এ সুরাসমূহে। পাশাপাশি মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠন তথা দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের যাবতীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন আত-তীন, আদ-দুহা, আল-মাউন সুরাগুলো মক্কি সুরা। এ সুরাসমূহে উত্তম নৈতিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ঘ) জনাব মনসুরের আলোচিত সুরাটি মাদানি সুরা। যার বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অবতরণের সময় বিবেচনায় আল-কুরআনের সুরাসমূহকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মদিনায় নাজিল হওয়া সুরাগুলোকে সাধারণত মাদানি সুরা বলা হয়। জনাব মনসুরের ইঙ্গিতকৃত সুরাগুলো এই শ্রেণির সুরাসমূহের বৈশিষ্ট্যই ধারণ করেছে। জনাব মনসুর যে সুরাগুলো সম্পর্কে বলছিল সেগুলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে বিশেষ এক সময়ের পরে নাজিল হয়েছে। এ সুরাগুলো সাধারণত আকারে দীর্ঘ এবং আয়াতগুলোও বড়। এ সুরাগুলোতে ইসলামের বিধি-বিধান, রীতি- নীতি, ক্রয়-বিক্রয়, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো মাদানি সুরাগুলোর মধ্যেও বিদ্যমান। মহানবি (স) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর নাজিলকৃত সুরাগুলোকে মাদানি সুরা হিসেবে গণ্য করা হয়। এগুলো এ সুরাগুলোতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। এককথায় মানবজীবনের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত নীতি মাদানি সুরায় তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, জনাব মনসুর মাদানি সুরা সম্পর্কেই কথা বলছিলেন।