উদ্দীপকঃ-
=> "উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে সমাজকর্মের গুরুত্ব" শীর্ষক একটি সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব মোমেন স্যার সমাজকর্মে সক্ষম করার প্রক্রিয়া, সকলের কল্যাণ, সামাজিক ভূমিকা পালন, মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক সম্পর্ক, পেশাগত সাহায্য ইত্যাদি লক্ষ্যের কথা বলেন। তিনি বলেন, এগুলো পূরণের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর তাদের সামাজিক সমস্যার সমাধান, মৌল চাহিদা পূরণ, ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, পরিবর্তন সাধনাসহ বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন-
ক. সক্ষমকারী প্রক্রিয়া কোনটি?
খ. সমাজকর্মের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা লিখ।
গ. উদ্দীপকে মোমেন স্যার সমাজকর্মের কোন কোন বিষয়ে লক্ষ রাখতে বলেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে সমাজকর্ম কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে তুমি মনে কর? আলোচনা করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
খ) সমাজকর্মের একটি সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে International Federation of Social Workers (IFSW), সংজ্ঞাটিতে বলা হয়, 'সমাজকর্ম হলো একটি অনুশীলনধর্মী পেশা ও একাডেমিক বিষয় যা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন, সামাজিক সংযোগ এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা লাভে সচেষ্ট। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, যৌথ দায়িত্ব এবং বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নীতি সমাজকর্মের কেন্দ্রীয় বিষয়।
গ) উদ্দীপকের অধ্যাপক জনাব মোমেন সমাজকর্মের লক্ষ্যের কথা বলেছেন।
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো সামাজিক, আর্থিক ও মানসিক সমস্যামুক্ত একটি সুখী সমাজ গঠন; যা সামাজিক ভূমিকার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়। সমাজকর্ম সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়ার উন্নয়ন, জীবনমানের উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ সাধন, মানুষকে সক্ষম করা, সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন পেশাগত সাহায্য প্রদান প্রভৃতি লক্ষ্যে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে সমস্যাগ্রস্থ মানুষকে সক্ষম করে তোলে।উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব মোমেন সক্ষম করার প্রক্রিয়া, সকলের কল্যাণ, সামাজিক ভূমিকা পালন, মিথস্ক্রিয়া প্রভৃতি লক্ষ্যের কথা বলেন। যেগুলো সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়। মানুষের সমস্যা সমাধান, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং উন্নয়নমূলক ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে। আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বহুমুখী সমস্যার কারণে মানুষ নিজ নিজ ভূমিকা পালনে বাধাগ্রস্থ হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করে সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন সাধনে সমাজকর্ম কাজ করে। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো সামাজিক আন্তঃক্রিয়ার বা মিথস্ক্রিয়ার বাধাসমূহ দূর করে সম্পর্কের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের অধ্যাপক জনাব মোমেন তার বর্ণনানুযায়ী সমাজকর্মের লক্ষ্যকেই নির্দেশ করেছেন।
ঘ) সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজকর্মের পেশাগত অনুশীলন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্রদ্র্য, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা প্রভৃতি মৌল, মানবিক চাহিদা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্বের আধিক্য, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের ক্ষেত্রকে বাধাগ্রস্থ করছে। এ সকল সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম।উদ্দীপকের অধ্যাপক জনাব মোমেন একটি সেমিনারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামাজিক সমস্যার সমাধান, মৌল চাহিদা পূরণ, অবস্থার পরিবর্তন সাধনসহ বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের সক্ষমতা অর্জনের জন্য সমাজকর্মের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আত্মকর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, অপরাধ, ন্যায়বিচার প্রভৃতি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, কিশোর অপরাধ প্রভৃতি দমনে সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি সমাজকর্ম প্রয়োগ করে। দারিদ্রদ্র্য, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, মাদকাসক্তি, বস্তি সমস্যা, সন্ত্রাস প্রভৃতি মোকাবিলায় সমাজকর্ম প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
সুতরাং উপরের আলোচনা বিশ্লেষণ করে বলা যায়, সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি, জ্ঞান, দক্ষতা, লক্ষ্যের কার্যকর প্রয়োগ উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা সমাধান ও সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।