প্রশ্ন- অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি আলোচনা কর?
উত্তরঃ- ভূমিকাঃ দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন তেমন জটিল নয়। অংশীদারি আইনের ৫৮(১) ধারায় নিবন্ধন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে এদেশে অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতিঃ- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫৮(১) ধারা অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধনের জন্য সরকার নিযুক্ত রেজিস্ট্রারের অফিসে নির্ধারিত ফরমে ও নির্দিষ্ট ফী দিয়ে দরখাস্ত করতে হয়। অংশীদারগণ যথাযথভাবে ফরমটি পূরণ করে এবং দস্তখত দিয়ে ফরমটি রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করবে। ফরমটিতে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকে সেগুলো নিম্নরূপ-
১. ফার্মের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা।
২. ফার্মের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি।
৩. ফার্ম প্রতিষ্ঠার তারিখ।
৪. অংশীদারগণের সংগঠনে যোগদানের তারিখ।
৫. প্রত্যেক অংশীদারদের নাম, পেশা ও পূর্ণ ঠিকানা।
৬. ব্যবসায়ের সম্ভাব্য এলাকা।
৭. ব্যবসায়ের স্থায়িত্বকাল।
আবেদনপত্রে সকল অংশীদারগণকে তারিখসহ দস্তখত করতে হবে। তবে তাদের পক্ষে উপযুক্ত প্রতিনিধিরাও দস্তখত করতে পারবে।
নিবন্ধক আবেদনপত্রটি পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে ফার্মটিকে তালিকাভুক্ত করে নেয়। আবেদনপত্রে ও চুক্তিপত্রে নিবন্ধক তার দস্তখত ও সিলমোহর দেন। পরবর্তীতে চুক্তিপত্রের যেকোনো বিষয় পরিবর্তন করতে হলে নিবন্ধককে জানাতে হয়। কারণ নিবন্ধিত দলিলটির বিষয়বস্তু নিবন্ধকের অফিসে রক্ষিত বইতে লিপিবদ্ধ থাকে।
উপসংহারঃ- অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন যদিও বাধ্যতামূলক নয়, তথাপি অংশীদারগণ যদি ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজ সম্পাদন করতে পারে। অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলতে মূলত চুক্তিপত্রের নিবন্ধনকেই বোঝায়।
প্রশ্ন- অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন কারণসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ-
ভূমিকাঃ- অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন রলতে ব্যবসায়ের সম্পত্তি ও দেনা-পাওনার সার্বিক নিষ্পত্তিকে বোঝায়। অংশীদারগণ যেকোনো সময় ব্যবসায়ের বিলোপসাধন করতে পারে। ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি এবং সে সঙ্গে ব্যবসায়ের মূল্যায়ন ও সম্মতি বণ্টনের নিয়মাবলি চুক্তিপত্রে অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধনের কারণসমূহঃ-
একমালিকানা ব্যবসায়ের কতিপয় সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের লক্ষ্যে অংশীদারি বিলোপসাধন ঘটে সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেক সময় বিভিন্ন কারণে এ ব্যবসায়ের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। যেসব কারণে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন ঘটেঃ-
১. চুক্তি অনুসারে বিলোপসাধনঃ- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী সকল অংশীদার একমত হয়ে বা তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ান্তে ব্যবসায়ের বিলোপসাধন করতে পারে।
২. বাধ্যতামূলক বিলোপসাধনঃ- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪১ ধারা মোতাবেক নিচের দুটি কারণের যেকোনোটির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ফার্মের বিলোপসাধন ঘটতে পারে।যথা-
(i) আদালত ফার্মের সকল অথবা একজন ছাড়া বাকি অংশীদারকে দেউলিয়া বলে ঘোষণা করলে।
(ii) যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো নতুন আইন প্রণয়নের ফলে এমন কিছু ঘটে, যার দরুন ফার্ম পরিচালনা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
৩. বিজ্ঞপ্তির দ্বারা ঐচ্ছিক বিলোপসাধনঃ- এ পদ্ধতিতে বিলোপসাধন একমাত্র ঐচ্ছিক অংশীদারি ফার্মের ক্ষেত্রে সম্ভব। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪৩ ধারা মোতাবেক যেকোনো সময় একজন অংশীদার অন্য সকল অংশীদারকে ব্যবসায় বিলোপসাধনে তার ইচ্ছার কথা জানালে ফার্মের ঐচ্ছিক বিলোপসাধন হতে পারে। এ প্রকার বিলোপসাধনে বিজ্ঞপ্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।,
৪. কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটার ফলে বিলোপসাধনঃ- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪২ ধারা মোতাবেক নিচের যেকোনো কারণে এ জাতীয় বিলোপসাধন ঘটতে পারে; যথাঃ-
(i) যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ফার্ম গঠিত হয়ে থাকে, তবে সময় শেষ হয়ে গেলে।
(ii) যদি কোনো বিশেষ কাজ করার জন্য ফার্ম গঠন করা হয়ে থাকে, তবে তা সম্পন্ন হলে।
(iii) যদি কোনো অংশীদার পাগল বা উন্মাদ হয়ে যায়।
(iv) যদি কোনো অংশীদারের মৃত্যু ঘটে।।
(v) যদি কোনো অংশীদার আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়।
(vi) যদি ফার্ম দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
আদালতের আদেশ অনুসারে বিলোপসাধন: ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪৪ ধারা মোতাবেক নিচের যেকোনো কারণে আদালত অংশীদারি ফার্মের বিলোপসাধনের আদেশ দিতে পারে।যথাঃ-
(i) যদি কোনো অংশীদার পাগল হয়ে যায়।
(ii) যদি কোনো অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় স্থায়িভাবে অক্ষম হয়।
(iii) যদি কোনো অংশীদার দেউলিয়া বলে প্রমাণিত হয়।
(iv) যদি কোনো অংশীদার অপরাধের জন্য আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়।
(v) যদি কোনো অংশীদার ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করে।
(vi) যদি কোনো অংশীদার তৃতীয় কোনো ব্যক্তির নিকট তার ব্যবসায়ের সমস্ত অংশ এবং স্বার্থ বিক্রি অথবা হস্তান্তর করে দেয় অথবা দেনার দায়ে আদালত তার ব্যবসায়ের অংশ আটক করে।
(vii) এছাড়া অন্য যেকোনো কারণে আদালত যদি মনে করে ফার্মের বিলোপ হওয়াই উচিত, তবে তা হবে।
উপসংহারঃ- বাংলাদেশে বলবৎ ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪০ থেকে ৪৪ ধারায় কী কী উপায়ে ও কোন কোন ক্ষেত্রে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে তা বর্ণিত আছে। উপরের আলোচনা তারই প্রতিফলন। উপর্যুক্ত কারণগুলোর জন্যই এ ব্যবসায়ের বিলোপসাধন হতে পারে।
প্রশ্ন- একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের মধ্যকার পার্থক্য বর্ণনা দাও? অথবা , একমালিকানা ব্যবসায় ও অংশীদারি ব্যবসায়ের মধ্যে তুলনা কর।
উত্তরঃ-
ভূমিকাঃ- একমালিকানা ব্যবসায় হলো এমন এক প্রকার ব্যবসায় সংগঠন যার মালিক, পরিচালক, সংগঠক ও পুঁজি সরবরাহকারী একজনমাত্র ব্যক্তি, ব্যবসায়ের সকল প্রকার ঝুঁকি বহন এবং সমুদয় মুনাফা যিনি এককভাবে ভোগ করে থাকেন। অন্যদিকে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অংশীদারি সংগঠন গড়ে তোলে। এ ধরনের ব্যবসায়ে সকল অংশীদার বা সকলের পক্ষে একজন কর্তৃক ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়।
একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের মধ্যে পার্থক্যঃ- একমালিকানা ব্যবসায় ও অংশীদারি ব্যবসায়ের মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে ব্যাপক মিল থাকলেও এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যাতে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের মধ্যকার পার্থক্য উপস্থাপন করা হলো-
উপসংহারঃ- একমালিকানা ও অংশীদারি সংগঠন দুটিই ব্যবসায় জগতের ক্ষুদ্র পরিসরের সংগঠন। তথাপি অংশীদারি সংগঠনের তুলনায় একমালিকানা সংগঠন অধিক জনপ্রিয়। এ দু সংগঠনের ক্ষেত্রেই মালিকদের দায় অসীম। মালিকদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপর ভিত্তি করেই ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। তবুও উপর্যুক্ত পার্থক্যগুলো বিদ্যমান থাকায় একমালিকানা সংগঠন ও অংশীদারি সংগঠন উভয়ই যে, পৃথক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত তা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়।
পার্থক্যের বিষয়
১. সংজ্ঞাগত
২. সদস্যসংখ্যা
৩. মূলধনের
যোগান
৪. লাভ-
লোকসান
বন্টন
৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণ
৬. নিবন্ধন
৭. গোপনীয়তা রক্ষা
৮. চুক্তি
৯. আয়তন
১০. স্থায়িত্ব | একমালিকানা ব্যবসায়
যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মাত্র একজন ব্যক্তি কর্তৃক স্থাপিত ও পরিচালিত হয় তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে।
একমালিকানা ব্যবসায়ে মাত্র একজন মালিক থাকে যিনি একাধারে মালিক, সংগঠক ও পরিচালক।
একমালিকানা ব্যবসায়ে একজনমাত্র মালিক বলে তার পক্ষে ব্যবসায়ের জন্য অধিক মূলধন বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।
একমালিকানা ব্যবসায়ে মালিক একাই ব্যবসায়ের সমস্ত লাভ ভোগ করে এবং লোকসানও তাকেই। এককভাবে বহন করতে হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একমালিকানা সংগঠন অংশীদারি ফার্মের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে। কারণ একমালিকানা ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত মালিক নিজেই গ্রহণ করে থাকেন।
একমালিকানা সংগঠনের কোনো প্রকার নিবন্ধনের প্রয়োজন হয় না।
একমালিকানা ব্যবসায়ের একজন মাত্র মালিক বিধায় এতে ব্যবসায়সংক্রান্ত সকল প্রকার গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয়।
মালিকের উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টাই একমালিকানা ব্যবসায়ের ভিত্তি। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার চুক্তির দরকার হয় না।
একমালিকানা ব্যবসায়ের আয়তন অংশীদারি ব্যবসায়ের তুলনায় ছোট হয়।
একমালিকানা ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব অংশীদারি" ব্যবসায়ের তুলনায় অনেক বেশি। | অংশীদারি ব্যবসায়
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জন ও নিজেদের মধ্যে তা বণ্টনের উদ্দেশ্যে চুক্তিভিত্তিক যে ব্যবসায় গঠন করে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
অংশীদারি ফার্মে একাধিক মালিক বিদ্যমান। সাধারণ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তা ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন হয়ে থাকে।
অংশীদারি ব্যবসায়ে একাধিক মালিক বিদ্যমান। থাকায় অধিক পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের, লাভ-লোকসান অংশীদারদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে বন্টিত হয়।
অংশীদারি সংগঠনে সদস্যদের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ হয়।
অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায়ের বেলায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
অংশীদারি ব্যবসায়ে একাধিক মালিক থাকায় ব্যবসায়সংক্রান্ত তথ্যাদির পুরোপুরি গোপনীয়তা সবসময় রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
■ চুক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের মূলভিত্তি। বৈধ চুক্তি ছাড়া কোনো অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হতে পারে না।
অংশীদারি ব্যবসায়ের আয়তন একমালিকানা ব্যবসায়ের তুলনায় বড় হয়।
" অংশীদারি ব্যবসায়ে স্থায়িত্ব একমালিকানা জ্ঞান ব্যবসায়ের তুলনায় অনেক কম। |