উদ্দীপকঃ- 'রুমা ফুডস লি.' শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান।। উত্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কর্মীগণ কে, কি কাজ করবে, কিভাবে করবে- তা নির্ধারণ করেন জনাব রাফাত। অন্যদিকে মিসেস রাশেদা উক্ত প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি প্রায়শঃই একই সময়ে উৎপাদন বিভাগ এবং বিক্রয় বিভাগের ডক্যুমেন্টস কম্পোজ করা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত।
ক. ব্যবস্থাপনা কী?
খ. "ব্যবস্থাপনা সর্বজনীন"- ব্যাখ্যা করো।
গ. জনাব রাফাত ব্যবস্থাপনার কোন স্তরে অবস্থান করছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে মিসেস রাশেদা এর মানসিক চাপ দূরীকরণে তোমার সুপারিশ তুলে ধরো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পদসমূহকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা বলে।
খ) ব্যবস্থাপনার সর্বজনীনতা বলতে সর্বত্র, সব ক্ষেত্রে, সবার দ্বারা স্বীকৃত ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের আবশ্যকতা ও প্রয়োগ যোগ্যতাকে বোঝায়। পরিবার, রাষ্ট্র এবং ব্যবসায় সংগঠনের সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি (পরিকল্পনা প্রণয়ন সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ) প্রয়োগ করা হয়। স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি, সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। তবে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। তাই ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন বলা হয়।
গ) উদ্দীপকের জনাব রাফাত ব্যবস্থাপনার নিম্নস্তরে অবস্থান করছেন। মধ্যম স্তরের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রণীত কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক-- কর্মীদের কার্য তদারকি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে নিম্নস্তরীয় ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়। এ স্তরের ব্যবস্থাপকগণ সরাসরি কাজ বাস্তবায়নের সাথে জড়িত থাকেন। এদেরকে প্রথম সারির ব্যবস্থাপকও বলা হয়। এরা মূলত শ্রমিকদেরকে আদেশ-নির্দেশ দিয়ে থাকেন। উদ্দীপকে বর্ণিত রুমা ফুডস লি. একটি শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। জনাব রাফাত উক্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কর্মীদেরকে, কী কাজ, কীভাবে করবে তা নির্ধারণ করে দেন। তার কাজ মূলত কাজ বাস্তবায়নের সাথে জড়িত। তিনি সরাসরি উৎপাদন কর্মীদের আদেশ- নির্দেশ দেন। তাছাড়া কর্মীদের কাজ তদারকি করেন। এজন্য তিনি ব্যবস্থাপনার নিম্ন স্তরে অবস্থান করছেন বলা যায়।
ঘ) উদ্দীপকের মিসেস রাশেদার মানসিক চাপ দূরীকরণে আদেশের ঐক্য নীতি অনুসরণ বা দ্বৈত অধীনতা বর্জন করতে হবে।এ নীতি অনুযায়ী একজন কর্মী বা অধীনস্ত ব্যক্তি একজনমাত্র নির্বাহী বা উপরস্থের আদেশ মেনে চলবে। এ নীতিতে দ্বৈত অধীনতা পরিহার করা হয়। দ্বৈ-অধীনতা থাকলে কর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কর্মীরা কার আদেশ প্রাধান্য দেবে তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে। এতে কর্মীরা মানসিকভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে।উদ্দীপকে বর্ণিত রাশেদা। 'রুমা ফুডস লি'- এ কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। তাকে একই সময়ে উৎপাদন বিভাগের কাজ এবং বিক্রয় বিভাগের কাজের নির্দেশ দেয়া হয় এতে তিনি কোনটি আগে সম্পাদন করবেন তা নিয়ে ঝামেলায় পরে যান। এজন্য তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তিনি একইসাথে দু'টি বিভাগের নির্বাহীর অধীনে কাজ করছেন যা আদেশের ঐক্যের লঙ্ঘন। এজন্য তাকে একজন নির্বাহীর অধীনে রাখতে হবে। এতে তার মানসিক চাপ লাঘব হবে।
উদ্দীপকঃ- মি. রোজারিও 'টেকভিলা বাংলাদেশ' এর ক্রয় ব্যবস্থাপক।তিনি প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে সফটওয়্যার, মাইক্রো চিপ্স ও আনুষঙ্গিক উপকরণ ক্রয় করার জন্য তার অধীনস্থ ৫ জন ব্যবস্থাপকের ওপর দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তারা মি. রোজারিও এর নির্দেশনা মোতাবে কার্যসম্পাদন করেন এবং নিয়মিত তাদের কাজ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তাকে প্রদান করেন। রোজিারিও সাহেব ঝামেলাপূর্ণ সরবরাহকারীদেরকে নিজেই দেখভাল করেন এবং অত্যন্ত কৌশলে পরিস্থিতি সামাল দেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্য-প্রযুক্তি ফার্মে রূপ নিতে যাচ্ছে।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
খ. প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে কার্যগত পার্থক্য দেখাও।
গ. মি. রোজারিওর কার্যক্রমে ব্যবস্থাপকের কোন দক্ষতা পরিলক্ষিত হচ্ছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. "প্রাতিষ্ঠানিক ফলপ্রদতা অর্জনে মি. রোজারিওর ভূমিকা মুখ্য"- ব্যবস্থাপকের ভূমিকার আলোকে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক হলেন আমেরিকান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফ্রেডেরিক উইন্সলো টেলর (Frederick Winslow Taylor)।
খ) প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার পার্থক্য নিম্নরূপ-
প্রশাসনঃ-
১. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উচ্চপর্যায়ের তত্ত্ববধান সংক্রান্ত কার্যাবলির সাথে প্রশাসন সম্পৃক্ত।
২. প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
৩. প্রশাসনের যারা কাজ করেন তারা প্রশাসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
৪. প্রশাসন পরিচালনা পর্যেেদর নিকট দায়ী থাকে।
ব্যবস্থাপনাঃ-
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরন, কর্মীসংস্থান সমন্বয়সাধন, প্রেষণা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজের সাথে ব্যবস্থাপনা জড়িত।
২. প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কর্ম ব্যবস্থা গ্রহণ করো।
৩. ব্যবস্থাপনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা ব্যবস্থাপক।
৪. ব্যবস্থাপনা সরাসরি প্রশাসনের নিকট দায়ী থাকে।
গ) উদ্দীপকের মি. রোজারিওর কার্যক্রমে ব্যবস্থাপকের মাননীয় দক্ষতার দিকটি পরিলক্ষিত হচ্ছে।কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, তাদের প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা হলো মানবীয় দক্ষতা। কর্মীদেরকে দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের আবেগ-অনুভূতি, মনোভাব ও ইচ্ছা-অনিচ্ছা বুঝতে হয়। এজন্য তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়।উদ্দীপকের মি. রোজারিও একজন ক্রয় ব্যবস্থাপক। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য সফটওয়্যার, মাইক্রো চিপসসহ অন্যান্য উপকরণ ক্রয় করেন। এজন্য তিনি তার অধীনস্থ পাঁচজন ব্যবস্থাপকের ওপর দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। ব্যবস্থাপকগণ তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন এবং নিয়মিত কাজ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তাকে প্রদান করেন। তাই দেখা যায় তিনি কার্য করিয়ে নেওয়ার জন্য অধীনস্থদের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছেন এবং প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি অধীনস্থদের কাজ সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবরও রাখছেন। এজন্য তার এ সংক্রান্ত দক্ষতাকে মানবীয় সম্পর্কগত দক্ষতা বলা যায়।
ঘ) উদ্দীপকের মি. রোজারিও আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকা পালন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ফলপ্রদতা অর্জনে তার এই ভূমিকাই মুখ্য অবদান রেখেছে। ব্যবস্থাপকের আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকা বলতে সহকর্মী, অধীনস্থ ও প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন পাওনাদার, প্রতিযোগী, সরবরাহকারী পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাকে বোঝায়। এতে পাম্পরিক সম্পর্ক জোরদার হয়। ফলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।উদ্দীপকে বর্ণিত মি. রোজারিও একজন ক্রয় ব্যবস্থাপক, তিনি অধীনস্থদের দিয়ে ক্রয় সংক্রান্ত কাজ করিয়ে থাকেন। তবে ঝামেলাপূর্ণ সরবরাহকারীদেরকে নিজেই দেখভাল করেন এবং অত্যন্ত কৌশলে পরিস্থিতি সামাল দেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি ফার্মে রূপ নিতে যাচ্ছে।তাই দেখা যায় চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষের মতো তিনি সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন ও বেশি ঝামেলাপূর্ণ বিষয় নিজেই তদারকি করেন। তিনি অতি কৌশলে সমস্যা মোকাবিলা করেন। তার কার্যকর পদক্ষেপ ও কৌশলের কারণেই প্রতিষ্ঠান সাফল্য পাচ্ছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মি. রোজারিও এর আন্তঃব্যক্তিক ভূমিকার ফলেই প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটেছে।