উদ্দীপকঃ-
=> সেনবাগ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জনাব আবু জাফর টিপু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করে পৌরসভার বাজারে মূল্যতালিকা বোর্ড স্থাপন করেন। এ তালিকার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি লিটারে ১২০ টাকা। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যায় সয়াবিন তেলসহ প্রতিটি দ্রব্যের দাম তালিকায় দামের চেয়ে অনেক বেশি। দোকানিরা এ উচ্চমূল্যের জন্য যোগানের স্বল্পতা, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি গুদামের অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতাকে দায়ী করেন।
ক. আড়াই-দিন-কা ঝোপড়া মসজিদ কে নির্মাণ করেন?
খ. চল্লিশ চক্রের পরিচয় দাও।
গ. অনুচ্ছেদে উল্লিখিত জনাব আবু জাফর টিপুর কর্মকাণ্ডে তোমার পঠিত কোন শাসকের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রতিফলন ঘটছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে মেয়র আবু জাফর টিপু কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) আড়াই-দিন-কা ঝোপড়া মসজিদ নির্মাণ করেন কুতুবউদ্দিন আইবেক।
খ) সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমলে প্রভাব প্রতিপত্তিসম্পন্ন চল্লিশজন আমিরই চল্লিশচক্র হিসেবে পরিচিত।
এই চল্লিশজন তুর্কি-আমিরের বিরুদ্ধে বলবন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি নিম্নপদস্থ তুর্কিদেরকে আমির পদে নিয়োগ দেন এবং পূর্বের প্রভাবশালী আমিরদেরকে সামান্য অপরাধের কারণে শাস্তির বিধান করেন। ফলে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনামলে যে চল্লিশজন আমিরের দরুন সুলতানের সম্মান ও ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এভাবে তিনি জনমনে স্বীয় সম্মান ও প্রতিপত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
গ) উদ্দীপকে মেয়র আবু জাফর টিপুর দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রতিফলন ঘটেছে।উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি যে, সেনবাগ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জনাব আবু জাফর টিপু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করে পৌরসভার বাজারে মূল্যতালিকা বোর্ড স্থাপন করেন। এ মূল্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার প্রতিফলন আমরা আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যেও লক্ষ করি।সু্লতান আলাউদ্দিন খলজি সিংহাসনে আরোহণ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। মূলত আলাউদ্দিন খলজি মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও | রাজ্যবিস্তারের জন্য যে সেনাবাহিনী গঠন করেন তাদের স্বল্পব্যয়ে পোষণের জন্য তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করেন। যেমন- গম প্রতিমণ ৭ ১/২ জিতল (জিতল = .০৬ পয়সা), বার্লি প্রতিমণ ৪ জিতল, ধান প্রতিমণ ৫ জিতল, ডাল প্রতিমণ ৫ জিতল, তিল তৈল ৩ সের ১ জিতল, মাখন ২১/২ সের ১ জিতল ইত্যাদির মূল্য তিনি নির্ধারণ করেন। সুতরাং বলা যায়, উল্লিখিত মেয়রের কর্মকাণ্ড সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ঘ) উদ্দীপকে মেয়র আবু জাফর টিপু মুদ্রাস্ফীতি রোধ, গুদামঘর নির্মাণ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দমনের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেন।ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মূল্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য বাজার স্থাপন, বাজার পরিদর্শন ব্যবস্থা, নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করা, মজুত নিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। উদ্দীপকের মেয়রও এরূপ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সফল হতে পারেন। মূল্য নিয়ন্ত্রণে আবু জাফরকে প্রথমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।এছাড়া খাদ্যঘাটতি পূরণ করার জন্য শস্যাগার বা গুদামঘর নির্মাণ করার মাধ্যমে তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেন।ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সেদিকেও তাকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মাধ্যমেও এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেন। পণ্যদ্রব্য যাতে সময়মতো ক্রেতার নিকট সরবরাহ করা যায় সেজন্য পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া বাজারের ফটকা ব্যবসায়ীদের দমন করে তিনি এ নীতি কার্যকর করতে পারেন। পণ্যদ্রব্য মজুত করে মজুতদাররা যাতে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যও তাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে আবু জাফর টিপুকে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মতোই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।