ক. সুলতানি আমলের আকবর বলা হয় কাকে?
খ. রেশনিং ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
গ. প্রদত্ত ছকে ১নং '?' চিহ্নিত স্থানে কোন শাসকের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ৩নং '?' চিহ্নিত স্থানে নির্দেশিত শাসককে কি উক্ত বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়? বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) সুলতানি আমলের আকবর বলা হয় সুলতান আলাউদ্দিন খলজিকে।
খ) রেশনিং ব্যবস্থা বলতে পণ্য বরাদ্দ নির্ধারণকে বোঝায়।রেশনিং ব্যবস্থা সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মহান উদ্ভাবিত একটি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী একটি পরিবার সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয় করতে পারত। এ ব্যবস্থার ফলে দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কখনও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি।
গ) ১নং '?' চিহ্নিত স্থানে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের কথা বলা হয়েছে প্রদত্ত ছকে।উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, একজন ক্রীতদাস একসময় একটি অঞ্চলের শাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ক্রীতদাস ছিলেন বলে তার প্রতিষ্ঠিত বংশকে দাস বংশ বলা হয়। প্রদত্ত ছকের ১নং চিহ্নিত স্থানে মামলুক বংশের প্রথম শাসককে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখানে মূলত কুতুবউদ্দিন আইবেকের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রাথমিক জীবনে একজন ক্রীতদাস হয়েও পরবর্তীতে দিল্লি সালতানাতের শাসকের মর্যাদা লাভ করেন। আর তার প্রতিষ্ঠিত এ রাজবংশকে মামলুক বা দাসবংশ বলা হয়। তিনি সৎ চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী এবং অত্যধিক কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন।ঈশ্বরী প্রসাদ কুতুবউদ্দিন আইবেক সম্পর্কে বলেন, 'আইবেক ছিলেন ক্ষমতাধর এবং সুযোগ্য শাসক, তিনি সর্বদা উচুস্তরের চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতেন। তিনি ছিলেন অসীম সাহসী, পরিশ্রমী ও ন্যায়পরায়ণ। তিনি ধর্মানুরাগী ছিলেন। তবে তার মধ্যে পরধর্মসহিষ্ণুতার অভাব ছিল না। তিনি ছিলেন স্বাধীন দিল্লি সালতানাতের গোড়াপত্তনকারী। সেনানায়ক হিসেবেও তিনি অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় দেন। আবার তিনি একজন যোগ্য শাসক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। তার রাজত্বকালে জননিরাপত্তার কোনো অভাব ছিল না। চোর ও চৌর্যবৃত্তি প্রশ্নাতীত ব্যাপার ছিল বলে ঐতিহাসিক হাসান নিযামী উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া দিল্লির কুয়াত উর ইসলাম মসজিদ, আড়াই দিন-কা-ঝোপড়া' মসজিদ ও কুতুবমিনার তার শিল্প-সাংস্কৃতিক কৃতিত্বের নিদর্শন বহন করে। সুতরাং বলা যায়, কুতুব উদ্দিন আইবেক ছিলেন একজন অসীম সাহসী সেনাপতি। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা ও প্রজাতজ্ঞক শাসক।
ঘ) ৩নং '?' স্থানে নির্দেশিত শাসককে অর্থাৎ শামসউদ্দিন ইলতুৎমিশকে মামলুক বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।প্রদত্ত ছকের ৩নং '?' স্থানে নির্দেশিত সুলতান ইলতুৎমিশ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সাম্রাজ্যকে কণ্টকমুক্ত করার প্রচেষ্টা চালান। তিনি সকল গোলযোগ ও সংকট দূর করে দিল্লি সালতানাতে পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনেন। সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে বিচলিত না হয়ে একজন বাস্তববাদী শাসক হিসেবে তিনি অত্যন্ত বিজ্ঞতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রসর হন। তিনি সামরিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্রোহ দমন করে অযোধ্যা, বারানসি, বাদাউন, সিওয়ালিকসহ দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তার অবস্থান সুদৃঢ় করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর পর সুলতান আরাম শাহের দুর্বল শাসনের সুযোগে ক্ষমতালোভী অভিজাতবর্গ, আমির-মালিক এবং প্রদেশ পালদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এছাড়া সিন্ধু, বাংলা, রণথম্ভোর ও গোয়ালিয়র ইত্যাদির স্বাধীনতা ঘোষণার ফলে ভারতে তুর্কি আধিপত্য বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ইলতুৎমিশ সুলতান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাহস, দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাভূত করে দিল্লি সালতানাতের অস্তিত্ব রক্ষা করেন। একই সাথে সালতানাতকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিতও করেন। মূলত তার দৃঢ়তা ও উদ্যমশীল কর্মপ্রচেষ্টা ভারতীয় মুসলিম সাম্রাজ্য দিল্লি সালতানাতকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং অঙ্কুরে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, সুলতান ইলতুৎমিশ ছিলেন রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।