মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার নামাজের পূর্বের আলোচনায় পবিত্র কুরআনের এমন একটি সূরার তাফসির করলেন যাতে কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। পরবর্তী জুমার দিন তিনি এমন একটি সূরার তাফসির করলেন যেখানে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক নীতিমালা এবং উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
ক. ইসরাইল শব্দের অর্থ কী?
খ. ইসলামের মূল উৎস কুরআন বুঝিয়ে লেখ।
গ. ইমাম সাহেব প্রথম জুমার দিন কোন ধরণের সুরার তাফসির করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ইমাম সাহেবের দ্বিতীয় জুমার দিনের আলোচনায় যে ধরণের সুরার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) ইসরাইল শব্দের অর্থ আব্দুল্লাহ বা আল্লাহর বান্দা।
খ) মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকায় আল কুরআনকে ইসলামের মূল উৎস বলা হয়। মানবজীবনের সব সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান গ্রন্থ আল কুরআন। এই গ্রন্থটি আগত-অনাগত, সব মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের জীবনের এমন কোনো প্রসঙ্গ, দিক ও বিষয় নেই, যা আল কুরআনে উত্থাপন করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সুরা আনআমের ৩৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'এ কিতাবে আমি কোনো কিছু লিপিবদ্ধ করা বাকি রাখিনি।'
গ) ইমাম সাহেব প্রথম জুমার দিন মঞ্চি সুরাসমূহের তাফসির করেছেন যেগুলোর বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।সাধারণতভাবে মক্কায় নাজিলকৃত সুরাসমূহকে মক্তি সুরা বলা হয়। এ সুরাসমূহে মহান আল্লাহ তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছেন। মানুষের উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যম কীভাবে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করা যায় তার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এসব সুরায়। ইমাম সাহেব এসব সুরার তাফসির করেছেন।উদ্দীপকের ইমাম সাহেব মক্কি সুরার তাফসির করছিলেন যাতে আখিরাত, তাকদীর প্রভূতি ইমানের মৌলিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়েছে। বস্তুত এসব সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ) বর্ণনার পাশাপাশি আল্লাহর একত্ববাদ অস্বীকারের পরিণতি সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া রিসালত কী, রিসালতের দায়িত্ব কারা পালন করেছেন, দায়িত্ব পালনের রীতিনীতি সম্পর্কিত নানা বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে মক্কি সুরাসমূহে। আবার আখিরাতের বিচার ব্যবস্থা, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নাম ও শেষ পরিণতির বর্ণনা রয়েছে এ সুরাসমূহে। পাশাপাশি মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠন তথা দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের যাবতীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘ) ইমাম সাহেব মাদানি সুরা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। অবতরণের সময় বিবেচনায় আল-কুরআনের সুরাসমূহকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মদিনায় নাজিল হওয়া সুরাগুলোকে সাধারণত মাদানি সুরা বলা হয়। ইমাম সাহেবের আলোচিত সুরাগুলো এই শ্রেণির সুরাসমূহের বৈশিষ্ট্যই ধারণ করেছে।ইমাম সাহেব যে সুরাগুলোর তাফসির কারছেন সেগুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির আলোচনা এসেছে। এ সুরাগুলোতে ইসলামের বিধি-বিধান, রীতি-নীতি, ক্রয়-বিক্রয়, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো মাদানি সুরাগুলোর মধ্যেও বিদ্যমান। মহানবি (স) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর নাজিলকৃত সুরাগুলোকে মাদানি সুরা হিসেবে গণ্য করা হয়। এগুলো আকারে দীর্ঘ এবং আয়াতগুলোও বড়। এ সুরাগুলোতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। এককথায় মানবজীবনের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত নীতি মাদানি সুরায় তুলে ধরা হয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, ইমাম সাহেব মাদানি সুরার তাফসির করছিলেন।