উদ্দীপকঃ-
লালসালু উপন্যাসের ভন্ড পীর মজিদ কিশোরী জমিলাকে বিয়ে করে মাজারের সেবায় নিয়োজিত করে। কিন্তু জমিলা মজিদের ভণ্ডামির রহস্য বুঝতে পারে। সে মজিদের অবাধ্য হয়ে ওঠে। মজিদের গায়ে থু থু মারে। স্বামী হিসেবে মজিদকে মেনে নেয়নি। বরং সে মজিদের বিরুদ্ধে আরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। মজিদ শুধু বলে, নাফরমানি করিও না।
ক) কিন্তু আমাদের বজরায় কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। উক্তিটি কার?
খ) পীর সাহেবকে বহিপীর বলার কারণ কী?
গ) উদ্দীপকের মজিদ ও 'বহিপীর' নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ) উদ্দীপকপর মজিদ কি নাটকের বহিপীর চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে কি? বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ-
ক) উক্তিটি খোদেজার।
গ) ধর্মের অজুহাতে ভন্ডামির দিক থেকে উদ্দীপকের মজিদ বহিপীর' নাটকের বহিপীর চরিত্রের সাদৃশ্য রণেকের 'বহিপীর' নাটকের বহিপীর একটি সর্বগ্রাসী ভন্ড চরিত্র। ধর্মের ঐ অজুহাতে তিনি মানুষকে শোষণ করেন এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ অশিক্ষিত মানুষকে তার হাতের পীড়লো পরেশত করেন। তিনি এমনভাবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন যে, তারা নিজের ভিটেমাটি দিয়ে হলেও তার চাহিদা পুরো করে।এমনকি তিনি তার মুরিদের অসমবয়সী কিশোরী কন্যাকে বিয়ে ও করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।উদ্দীপকের মজিদ ও ধর্মের নামে মানুষকে শোষণ করে ঠকায়। সে পুরোনো একটা কবরকে মোদাচ্ছের পীরের কব্বর কবলে মানুষকে প্রতারিত করে। গ্রামের ধর্মভীরু লোকেরা সরল বিশ্বাসে তার কথায় ঠকে। এই সুযোগে মজিদ ধর্মের নামে ভণ্ডামি করে মাজার ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ ও সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নেয় এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে কিশোরী জমিলাকে। কাজেই উদ্দীপকের মজিদ ও 'বহিপীর' নাটকের বহিপীর চরিত্রের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ) উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি 'বহিপীর' নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে না।'বহিপীর' নাটকের তাহেরাকে কেন্দ্র করেই নাটকটির ঘটনা প্রবাহ আবর্তিত হয়েছে। তার পিতা ও সৎ মা মিলে তাকে বৃদ্ধ বহিপীরের সাথে বিয়ে দিলে সে এর প্রতিবাদে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে এক জমিদারের বজরায় আশ্রয় নেয়। ঘটনাক্রমে বহিপীরও সেই বজরায় হাজির হলেও তাহেরা সেই বৃদ্ধের সাথে তার ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। শেষ পর্যন্ত তাহেরা জমিদার ও পুত্র হাশেম আলির হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে বিশ অ শতকের শুরুতে নারী অধিকার ও জাগরণের প্রতীক হয়ে ওঠে।উদ্দীপকের কিশোরী জমিলা একটি প্রতিবাদী চরিত্র। 'লালসালু'নে উপন্যাসের ভণ্ড পীর মজিদের সাথে তার বিয়ে হলেও বৃদ্ধ মজিদের সে স্বামী হিসেবে মেনে নেয়নি। জমিলা মজিদের ভণ্ডামি প্র বুঝতে পেরে তার অবাধ্য হয়ে ওঠে এবং মজিদের গায়ে থুথু দেয়। মজিদের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।উপর্যুক্ত আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, উদ্দীপকের জমিলা ও 'বহিপীর' নাটকের তাহেরা- দুজনই প্রতিবাদী চরিত্র। তবে জমিলা প্রতিবাদী হয়েও তাকে স্বামীর অধীনে বন্দি থাকতে হয়েছে, আর তাহেরা স্বামীর অধিকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে নারী অধিকার ও জাগরণের প্রতীক চরিত্র হয়ে উঠেছে- যা জমিলা পারেনি। কাজেই উদ্দীপকের জমিলা চরিত্রটি 'বহিপীর' নাটকের তাহেরা চরিত্রটিকে পুরোপুরি নির্দেশ করে না।
উদ্দীপকঃ-
রহিমা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে শরীফা বেগমের কাছে আশ্রয় নেয়। তার জীবন গেলেও বুড়ো স্বামীর কাছে যাবে না। শরীফা বেগম তাকে বোঝান, স্বীমাবৃদ্ধ হলেও সেখানে সে সুখেই থাকবে। শরীফা বেগমের ছেলে নাহিদ মায়ের চিন্তা-ভাবনার সাথে একমত নয়।
ক) সূর্যাস্ত আইন কত সালে প্রণীত হয়?
খ) 'আমাকে বিবি সাহেব ডাকবে না'- তাহেরা কেন এ কথা বলেছে?
গ) উদ্দীপকের শরীফা বেগমের চিন্তাচেতনা 'বহিপীর' নাটকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ) উদ্দীপকের নাহিদ ও নাটকের হাশেম একই ভাবধারায় পরিপুষ্ট' বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ-
ক) সূর্যাস্ত আইন ১৭৯৩ সালে প্রণীত হয়।
গ) উদ্দীপকের শরীফা বেগমের চিন্তাচেতনা 'বহিপীর' নাটকের প্রাচীন পন্থা ও কুসংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরে।'বহিপীর' নাটকে খোদেজী জমিদার পত্নী। তার চিন্তা-চেতনা অনেকটা প্রাচীন ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। সে বিপদে পড়া স্বামীকে ছেড়ে পালানোর বিষয়টি মানতে পারে না। তাই বারবার সে বৃদ্ধ স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পরামর্শ দেয় তাহেরাকে। এমনকি সে নিজে বহিপীরের হাতে কিশোরী তাহেরাকে তুলে দিতে চায়।উদ্দীপকে শরীফা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা রহিমাকে আশ্রয় দেয়। কিন্তু যখন জানতে পারে যে সে বৃদ্ধ স্বামীর কারণে পালিয়েছে তখন বিষয়টি সমর্থন করে না। সে রহিমাকে স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পরামর্শ দেয়, নাটকের খোদেজাও তাহেরাকে বৃদ্ধ পীরের কাছে ফিরে যেতে বলেছিল। তাই বলা যায়, তারা দুজনেই প্রাচীন পন্থা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন।
ঘ) 'বহিপীর' নাটকের হাশেম আলি ও উদ্দীপকের নাহিদ দুজনেই আধুনিক ও প্রগতিশীল।'বহিপীর' নাটকে হাশেম আলি প্রগতিশীল শিক্ষিত যুবক। তার মধ্যে রয়েছে মানবিক চেতনা। তাদের বজরায় আশ্রয় পায় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা তাহেরা। এ সময় হাশেমের মা বিষয়টি মেনে নিতে পারে না। সে বৃদ্ধ স্বামীর কাছে ফিরে যেতে তাহেরাকে পরামর্শ দেয়। কিন্তু হাশেম আলি এ বিষয়টি মেনে নিতে পারে না। কেননা মতের বিরুদ্ধে কোনো কিছুই বৈধ নয়।উদ্দীপকে নাহিদ শিক্ষিত যুবক। তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা রহিমা। এখানে রহিমা অন্যায় বিয়ের শিকার। এ বিষয়টি তার মা সমর্থন করলেও সে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এছাড়া সে মেয়েটিকে রক্ষা করতে চায়।উদ্দীপকের নাহিদ রহিমার উপর হওয়া অন্যায় মেনে নিতে পারেনি। আর নাটকের হাশেম আলিও তাহেরার উপর বহিপীরের আগ্রাসনকে মেনে নেয়নি। তাই বলা যায়, তারা দুজনেই একাই ভাবধারায় পরিচালিত।