উদ্দীপকের বিষয়ঃ- জড়তাহীন সাহিত্য রচনা-এর আলোকে প্রণীত
উদ্দীপকঃ-
=> এখন আমাদের বাঙলা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করিতে হইলে সর্বপ্রথম আমাদের লেখার জড়তা দূর করিয়া তাহাতে ঝর্ণার মতো ঢেউভরা চপলতা ও সহজ মুক্তি আনিতে হইবে। যে সাহিত্য জড়, যাহার প্রাণ নাই, সে নির্জীব-সাহিত্য দিয়া আমাদের কোনো উপকার হইবে না। আর তাহা স্থায়ী সাহিত্যও হইতে পারে না। [তথ্যসূত্র: বাঙলা সাহিত্যে মুসলমান- কাজী নজরুল ইসলাম)
ক. সাম্য কোন ধরনের গ্রন্থ?
খ. "অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হয় না।"- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ঘ. "উদ্দীপকের বিষয়টি 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের খণ্ডাংশমাত্র"- বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) সাম্য একটি গদ্যগ্রন্থ।
খ) সাহিত্য রচনার সময় অন্যের লেখা অনুকরণ করে লিখলে দোষগুলোই অনুকরণ করা হয়, গুণগুলো হয় না- উক্তিটির মধ্য দিয়ে এ কথাই বোঝানো হয়েছে।অনেক লেখক আছেন যারা অন্য লেখক দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তাদের লেখা অনুকরণ করে সাহিত্য রচনায় সচেষ্ট হন। কিন্তু এরকম অনুকরণপ্রিয়তা সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর। কোনো একজন লেখক অন্য যেকোনো লেখক দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারেন, তবে অনুকরণ করলে বেশিরভাগ সময় দোষগুলোই অনুকৃত হয়। প্রাবন্ধিক এ কথা বোঝাতেই আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা করেছেন।
সারকথাঃ- যেকোনো লেখক অন্য লেখক দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারেন, কিন্তু অনুকরণ করতে গেলে দোষগুলো অনুকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গ) উদ্দীপকে 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের সাহিত্যের ভাষা হবে সহজ-সরল ও জড়তামুক্ত- এ দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্য মানুষের কথা বলে। যা মানুষের জন্য রচিত হবে তার ভাষা হতে হবে সহজ ও সরল। জটিল ভাষার মোড়কে জড়িয়ে রাখলে সাহিত্য সব মানুষের কাছে পৌঁছাবে না। তাই সাহিত্যে মনের ভাব প্রকাশের জন্য সহজ ও সরল ভাষা বেছে নিতে হবে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে সর্বপ্রথম লেখার জড়তা দূর করার দিকে নজর দিতে হবে।রচনার জড়তা দূর হলে লেখায় ঝরনার মতো চপলতা চলে আসে। যে সাহিত্য জড়, সেই সাহিত্যের প্রাণ নেই; সেই নির্জীব সাহিত্য দিয়ে আমাদের কোনো উপকার হবে না। যে সাহিত্য মানুষের উপকারে আসে না তা স্থায়ী সাহিত্যও হতে পারে না। অন্যদিকে 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের লেখক বলেছেন, অজানা ভাষা থেকে কিংবা অন্য গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে জটিল ভাষার কোটেশন ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ছাড়া অলংকারের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। যিনি সহজ ভাষায় মনের ভাব প্রকাশিত হয়েছে।প্রকাশ করতে পারেন তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক। লেখক মনে করেন, সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের সাহিত্যের ভাষা হবে সহজ, সরল ও জড়তামুক্ত- এ দিকটি প্রকাশ ঘটিয়েছে।
সারকথাঃ- আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের ভাষা হিসেবে সহজ-সরল ও জড়তামুক্ত ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উদ্দীপকেও সহজ-সরল ও জড়তামুক্ত ভাষার কথা বলা হয়েছে। সহজ ও সরল ভাষায় রচিত সাহিত্য মানুষের কাছাকাছি পৌঁছায় বলে তা বাংলা সাহিত্যে স্থায়িত্ব লাভ করে।
ঘ) "উদ্দীপকের বিষয়টি 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধের খণ্ডাংশমাত্র”- মন্তব্যটি যথার্থ।
সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে একজন লেখককে অনেক বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়। লেখার ভাষা কেমন হবে, ছন্দ ও অলংকারের ব্যবহার কেমন হবে- এসব বিষয় মাথায় রেখেই সাহিত্যে মনোনিবেশ করা জরুরি। এ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখলেই একজন সাহিত্যিক সফলতা অর্জন করতে পারেন।উদ্দীপকে আমাদের লেখার জড়তা বিষয়ে বলা হয়েছে। উদ্দীপকের লেখক সর্বপ্রথম আমাদের লেখার জড়তা দূর করার কথা বলেছেন। যে সাহিত্য জড়, যার প্রাণ নেই, সেই নির্জীব সাহিত্য মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। সে সাহিত্য কখনো স্থায়ী সাহিত্যও হতে পারবে না। 'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধেও উদ্দীপকের বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি ছাড়াও আলোচ্য প্রবন্ধে উঠে এসেছে একজন নতুন লেখক কোন কোন বিষয়ে নজর রেখে সাহিত্য সাধনা করবে সেসব বিষয়ে কিছু নির্দেশনা বা পরামর্শ। এসব নির্দেশনা বা পরামর্শ বিষয়ে উদ্দীপকে কোনো আলোচনা হয়নি।'বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নতুন লেখকদের সাহিত্য রচনার সময় কয়েকটি বিষয় বর্জন করতে বলেছেন এবং কয়েকটি বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সাহিত্য রচনা করতে বলেছেন। উদ্দীপকের বিষয়টি প্রবন্ধে উল্লিখিত বিষয়গুলোর একটি। কিন্তু এ বিষয়টি ছাড়াও অন্য আরও অনেক বিষয় থাকায় বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।সারকথাঃ- বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন প্রবন্ধে বলা হয়েছে সাহিত্যের ভাষা হবে সহজ, সরল ও জড়তামুক্ত। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছেন যা আলোচ্য প্রবন্ধের একটি মাত্র ভাব। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।