উদ্দীপকঃ-
=> কলেজ ছাত্র মুরাদ প্রতিদিন সকালে একটি ঐশী গ্রন্থের কিছু অংশ অধ্যয়ন করে, যার প্রতিটি বর্ণের বিনিময়ে সে পূণ্য প্রত্যাশা করে। তার বাবা জনাব আরিফ একদিন তাকে বললেন, এটি সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ ও সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং এতে কোনো ভুল- ত্রুটি ও সন্দেহ নেই। তাই মানুষের উচিত হলো তা অধ্যয়ন করে এর শিক্ষা বাস্তব জীবনে যথাযথ প্রয়োগ করা।
ক. আল কুরআনের পরিচয় দাও।
খ. আল কুরআনের প্রতিটি বর্ণ পাঠ করলে কতটি পূণ্য হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. এটি সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ ও সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস, প্রায়োগিক দিক থেকে বক্তব্যটির যথার্থতা নির্ণয় করো।
ঘ. আল-কুরআন অধ্যয়ন করে এর শিক্ষা কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায়? সমাজ জীবনে এর সুফল বর্ণনা করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) মানবতার হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবির ওপর নাজিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন।
খ) আল কুরআনের প্রতিটি বর্ণ পাঠ করলে দশটি পূণ্য রয়েছে।আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম কুরআন তিলাওয়াত। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ব্যক্তির মনে প্রশান্তি এনে দেয়। তাছাড়াও কুররান তিলাওয়াত সওয়াব লাভের এক বিশেষ মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে নবিজি (স) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ তিলাওয়াত করে সে একটি নেকি পায় আর এ প্রত্যেকটি নেকি দশটি নেকির সমান (সুনান আত-তিরমিযি)।
গ) পবিত্র কুরআন সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ এবং সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস- জনাব আরিফের এ বক্তব্যটি যথার্থ।
কুরআন মাজিদ আল্লাহর বাণী। এটি লাওহে মাহফুজ হতে জিবরাইল (আ)- এর মাধ্যমে নবুয়তের দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে মহানবি (স)-এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। আরিফের বক্তব্যে এ কিতাবটির বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। উদ্দীপকের জনাব আরিফ পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, এটি সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস। বস্তুত পৃথিবীর সকল গ্রন্থের মধ্যে পবিত্র কুরআন সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ। এ গ্রন্থের মর্যাদা তার ভাষাগত বৈশিষ্ট্য অবলোকন করলেই অনুধাবন করা যায়। আল কুরআনের বাক্য, শব্দ, ভাব, ভাষা, পাঠ, উচ্চারণ, উপমা, ছন্দ-মূর্চনা, রচনা শৈলির অভিনব গ্রন্থনা সবমিলিয়ে এক অতুলনীয় সাহিত্যিক মানে উন্নত। অপরদিকে এ মহাগ্রন্থে ব্যাকরণ, আইন, আধ্যাত্মিকতা, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, দর্শন, নৃতত্ত্ব ইতিহাস, সাহিত্য, তর্কশাস্ত্র, অলংকারশাস্ত্র, বর্ষপঞ্জীসহ জীবনঘনিষ্ঠ সব জ্ঞানের মূলনীতি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার আলোকে জনাব আরিফের বক্তব্যের যৌক্তিকতা পাওয়া যায়।
ঘ) আল কুরআনের পূর্ণ অনুশীলন ও অনুসরণ করে বাস্তব জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর শিক্ষা প্রয়োগ করা যায়।মহান আল্লাহ সমগ্র মানবতার পথনির্দেশিকা হিসেবে আল কুরআন নাজিল করেছেন। বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ করে চললে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। জনাব আরিফের বক্তব্যে এ বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।উদ্দীপকের জনাব আরিফ কুরআন অধ্যয়ন এবং বাস্তব জীবনে এর শিক্ষা প্রয়োগকরার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। বস্তুত আল কুরআন পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই, যা কুরআনে বর্ণনা করা হয়নি। মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে। কুরআনের এসব নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে বাস্তব জীবন সুন্দর ও সফল হবে। তাছাড়া সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আত্মীয়-অনাত্মীয়, মুসলিম-অমুসলিম, পাড়া- গ্রতিবেশী নিয়ে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে তাকে সামাজিক জীবনযাপন করতে হয়। অবিচার, জুলুম, ব্যভিচার ও নানারকম খারাপ নাচরণ মানুষের সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এ অবস্থা নিরসনে কুরআন ন্যায়বিচার, সদাচার ও প্রয়োজনীয় দণ্ডবিধানের ঘোষণা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন- 'হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। আল্লাহর জন্য ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান করো। যদিও তা তোমাদের পিতামাতা, নিজেদের ও আত্মীয়দের ব্যাপারে হয়।' (সুরা আন নিসা-১৪৫)।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় পবিত্র কুরআনের শিক্ষা যথাযথভাবে প্রয়োগ করলে মানুষের বাস্তব জীবন, সমাজজীবন সুখময় হবে।