উদ্দীপকঃ-
=> সম্রাট মিজান সুবিশাল রাজ্যে প্রচণ্ড ক্ষমতা নিয়ে শাসন করছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথেই রাজ্যে চরম বিশৃংখলা দেখা দেয়। পরবর্তীতে মহান শাসকের নেতৃত্বে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি হলেও তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে বিশাল রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এসব রাজ্যের মধ্যে শত্রুতা ও অবিশ্বাস এতই প্রকট ছিল যে, কেন্দ্রীয় শাসন বলে তার কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তবে এ অবস্থায় ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা রাজ্য আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজশক্তি প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
প্রশ্ন-
ক. ভারতবর্ষের প্রাচীনতম জাতির নাম কী?
খ. ভারতবর্ষ নামকরণ হয় কীভাবে?
গ. উদ্দীপকটি মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি মুসলিম বিজয়ের রাজনৈতিক অবস্থার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নয়- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) ভারতবর্ষের প্রাচীনতম জাতি হলো দ্রাবিড়।
খ) প্রাচীনকালে "ভরত" নামে একজন হিন্দু রাজা এদেশ শাসন করতেন। সম্ভবত তার নামানুসারে এদেশের নাম রাখা হয়েছে 'ভারতবর্ষ'। কারো মতে, গ্রিকরা এ দেশে আক্রমণ করতে এসে প্রথমত সিন্ধু অঞ্চলের সাথে পরিচিত হয়। সিন্ধু নদের অববাহিকাকে তারা 'ইন্ডাস' নামে অভিহিত করে। ইংরেজগণ তাদের শাসনামলে সিন্ধুকে 'ইন্ডাস' বলত। পরবর্তীকালে এই 'ইন্ডাস' হতে সমগ্র উপমহাদেশ 'ইন্ডিয়া' নামে অভিহিত হয়।
গ) অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার দিক দিয়ে উদ্দীপকটি মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন শাসনামলে রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক অনৈক্য একটি পরিচিত দৃশ্যপট। এ কারণেই বিভিন্ন অঞ্চল অতীতে ছোট ছোট ভাগে ভাগ হয়েছে এবং বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়েছে। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা তার বাস্তব প্রমাণ। উদ্দীপকেও এরূপ একটি দৃশ্যপট অঙ্কিত হয়েছে।উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, সম্রাট মিজান-এর মৃত্যুর সাথে সাথে রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরবর্তী শাসকের নেতৃত্বে রাজ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি হলেও তার মৃত্যুর সাথে সাথে বিশাল রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ফলে এখানে কেন্দ্রীয় শাসন বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থার ক্ষেত্রেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সম্রাট অশোক উত্তরে হিমালয় ও উত্তর-পশ্চিম হিন্দুকুশ পর্বতমালা হতে দক্ষিণে মহীশূর এবং পশ্চিমে পারস্যের সীমানা ও আরব সাগর হতে পূর্বে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরেই (২৩২ খ্রিষ্টাব্দ) ভারতবর্ষে রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা হয়। অতঃপর সপ্তম শতকের প্রথমভাগে উত্তর ভারতে সম্রাট হর্ষবর্ধন এবং দক্ষিণ ভারতে চালুক্য সম্রাট পুলকেশি মোটামুটিভাবে এদেশে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালান। তবে তাদের মৃত্যুর পর ভারতীয় ভূখণ্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো তাদের আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করতে তারা ব্যর্থ হয়। সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাই উদ্দীপকের দৃশ্যপটের সাথে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালের ভারতবর্ষের মিল রচনা করেছে।
ঘ) উদ্দীপকটি মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সাথে আংশিক সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নয়।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি যে, সম্রাট মিজান-এর রেখে যাওয়া সাম্রাজ্যে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা আক্রমণ করলে এদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজশক্তি প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু তৎকালীন ভারতবর্ষে কোনো কেন্দ্রীয় শক্তি ছিল না। ফলে মুসলিম আক্রমণকে প্রতিহত করতে তারা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।খ্রিষ্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে আফগানিস্তান ভারতীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হলেও অরাজকতার সুযোগ নিয়ে লানিয়া নামক এক ব্যক্তি সেখানকার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এছাড়াও গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে নেপাল স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ভাস্কর বর্মা আসামে স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন। আর যশোবর্মণ নামে এক স্বনামধন্য রাজা কনৌজে একটি স্বাধীন শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। সিন্ধুতে শাশীর চাচ ও পরে তার পুত্র রাজা দাহির শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। তাছাড়া মালব, দিল্লি, আজমির, বুন্দেলখণ্ড, গুজরাট, বাংলা ও বিহারে স্বাধীন শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে শতধাবিভক্ত ভারতীয় হিন্দু রাজ্যগুলো মুসলমানদের আক্রমণের বিরুদ্ধে একক কোনো শক্তি হিসেবে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিরোধের বিষয়টি মুসলমানদের ভারত আক্রমণকালে ভারতীয় রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে পরিদৃষ্ট হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।