উদ্দীপকঃ-
=> প্রফেসর মো: মাহাদ্বীন দ্বাদশ শ্রেণির নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজকর্ম পেশার উপর বক্তব্য দিচ্ছিলেন। রিমি তার পরিচয় দিতে গিয়ে তার বাবাকে সমাজকর্মী হিসেবে উল্লেখ করে। রিমির বাবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সমাজসেবায় নিয়োজিত। রিমির যুক্তি তার বাবা অসহায় ও দুস্থ মানুষের কল্যাণে এবং সমাজের উন্নয়নে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। সুতরাং তার বাবা একজন সমাজকর্মী।
ক. সমাজকর্ম কী?
খ. ডব্লিউ ফ্রিডল্যান্ডারের প্রদত্ত সমাজকর্মের সংজ্ঞা দাও?
গ. সমাজকর্মের চারটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।
ঘ. বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা।
খ) সমাজকর্মের ধারণা দিতে গিয়ে জার্মান আইনজ্ঞ ও শিক্ষক ডব্লিউ ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, "সমাজকর্ম হলো মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক এমন এক পেশাদার সেবাকর্ম যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এককভাবে বা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে।"
গ) উদ্দীপকে সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত রয়েছে।
শিল্প বিপ্লবোত্তর আধুনিক সমাজের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের সুসংগঠিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজে বসবাসরত অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সমাজকর্ম সহায়তা করে। যে কারণে একে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।শিল্পবিপ্লব পরবর্তী জটিল সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব সমস্যা মোকাবিলা, পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান ও মানুষের সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একইসাথে সম্পদের অপচয় রোধ ও সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাও সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এছাড়া ব্যক্তিকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে সমাজকর্ম কাজ করে। উদ্দীপকের প্রফেসর মো: মাহাদ্বীন যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা দিচ্ছিলেন সেটি সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি, নীতিমালা ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে; যা সমাজকর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মূলত আধুনিক শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যা সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য এ শাখার উদ্ভব হয়েছে। তাই বলা যায় উপরে আলোচিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমাজকর্ম কাজ করে।
ঘ) বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয় অর্থাৎ সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা, মূল্যবোধের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।বাংলাদেশের অস্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কারণে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়ত দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, প্রয়োজন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়। একইসাথে সমাজকর্মে নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতা অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়। তাই বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে সমাজকর্মের নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সামগ্রিক আলোচনায় তাই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সীমিত সম্পদের যথার্থ ব্যবহার এবং মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে | তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।