উদ্দীপকঃ-
=> কেশবপুরের শাসনকর্তা খায়রুজ্জামান পাশ্ববর্তী দেশ খড়মপুর বারবার আক্রমণ চালিয়ে প্রতিটি অভিযানে জয়লাভ করে। কিন্তু স্থায়ীভাবে রাজ্য দখল করা কিংবা শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা কোনোটাই তার উদ্দেশ্য ছিল না। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল খড়মপুর থেকে টাকা-পয়সা, মণিমুক্তা সংগ্রহ করে নিজ দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করা। (রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ।
প্রশ্নঃ-
ক. দেবল বন্দর কোথায় অবস্থিত?
খ. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর?
গ. কেশবপুরের শাসনকর্তা খায়রুজ্জামানের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের যুদ্ধাভিযানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. কেশবপুরের শাসকের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের তুলনা করবে? মতামত দাও।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) দেবল বন্দর ভারতে অবস্থিত।
গ) খায়রুজ্জামান-এর সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের সুলতান মাহমুদের অভিযানের সাদৃশ্য রয়েছে।
সুলতান মাহমুদ ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাতা ইসমাইলকে পরাজিত এবং কারারুদ্ধ করে গজনির সিংহাসনে আরোহণ করেন। অল্প বয়সে ক্ষমতা গ্রহণ এবং দিগ্বিজয়ের নেশা তাকে উপমহাদেশ বিজয়ে অনুপ্রাণিত করে। তিনি ১০০০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উপমহাদেশে মোট ১৭টি সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। প্রতিটি অভিযানেই তিনি কৃতিত্বের সাথে জয়লাভ করেন। উদ্দীপকেও এ ঘটনার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। কেশবপুরের শাসনকর্তা খায়রুজ্জামান পার্শ্ববর্তী খড়মপুরে বারবার আক্রমণ চালিয়ে প্রতিটি অভিযানে সফলতা লাভ করেন। তার এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল ধনরত্ন সংগ্রহ করে নিজ রাজ্যকে সমৃদ্ধ করা। খায়রুজ্জামানের এ অভিযানের সাথে গজনির সুলতান মাহমুদের ভারতবর্ষে অভিযানের মিল রয়েছে। সুলতান মাহমুদও তার পার্শ্ববর্তী উপমহাদেশে সতেরো বার অভিযান পরিচলনা করেন এবং প্রতিটি অভিধানেই সাফল্য অর্জন করেন। ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না। তিনি মূলত অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে বারবার ভারতবর্ষে আক্রমণ করেছেন। প্রতিবার অভিযানের সময় অসংখ্য ধন-রত্ন সংগ্রহ করে তিনি গজনিতে প্রত্যাবর্তন করেন। সুতরাং কেশবপুরের শাসক খায়রুজ্জামান-এর সাথে সুলতান মাহমুদের ভারতবর্ষ অভিযানের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ) কেশবপুরের শাসকের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের সুলতান মাহমুদের মিল লক্ষ করা যায়।পৃথিবীতে এমন অনেক বিজয়ী বীর রয়েছেন, যারা অসীম বীরত্বে যুদ্ধ করে দেশ জয় করেছেন; কিন্তু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন নি। যুদ্ধজয়ের নেশা আর সম্পদের মোহু তাদেরকে যুদ্ধে প্রলুব্ধ করেছে। এ রকমই দু'জন শাসক উদ্দীপকের খায়রুজ্জামান এবং পাঠ্যবইয়ের সুলতান মাহমুদ। সুলতান মাহমুদ উপমহাদেশের ধন-সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অসংখ্যবার অভিযান প্রেরণ করেছেন এবং প্রতিবারই সাফল্য অর্জন করেন। প্রতিবার অভিযানের সময় তিনি প্রচুর ধন-সম্পদ এ উপমহাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যান। তবে এ উপমহাদেশে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না। কেশবপুরের শাসনকর্তাও তার পার্শ্ববর্তী দেশে শুধু ধনসম্পদ আহরণের উদ্দেশ্যেই অভিযান প্ররণ করেন এবং প্রতিবার অভিযানেই তিনি সফল হন। একইভাবে সুলতান মাহমুদও ভারতবর্ষে সতেরো বার অভিযান প্রেরণ করে প্রতিবারই সফলতা অর্জন করেন। তিনি ভারত দেশে প্রচুর ধন রত্ন, মণিমুক্তা সংগ্রহ করে নিজ রাজ্য গজনিতে নিয়ে যান এবং এ রাজ্যের উন্নতিকল্পে এসব সম্পদ ব্যয় করেন। কেশবপুরের শাসক খায়রুজ্জমানের মতো তিনিও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেই এ সকল অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দেশ্য ও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে কেশবপুরের শাসকের অভিযানের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের সুলতান মাহমুদের উপমহাদেশে অভিযানের তুলনা করা যায়।