উদ্দীপকঃ-
=> ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর এলাকায় বাদল মিয়ার
লোকেরা সিলেটের চা ব্যবসায়ী তাহের মহাজনের চা বোঝাই ৮টি ট্রাক ছিনতাই করে। তাহের মহাজন তা ফেরত চাইলে বাদল মিয়া তার দায় অস্বীকার করে। এতে তাহের মহাজন ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। তবে বাদল মিয়ার সাথে তার আগে থেকেই কিছু বিষয়ে বিরোধ ছিল।
-
প্রশ্নঃ-
-
ক. ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?
-
খ. সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা?
-
গ. উদ্দীপকের সাথে সিন্ধু অভিযানের কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
-
ঘ. উদ্দীপকের মতো উত্ত অভিযানের কি পরোক্ষ আরও কারণ ছিল? বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্নের উত্তরঃ-
ক) মুহাম্মদ মুরী ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
খ) সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিপুল ধন-ঐশ্বর্য সংগ্রহ করা।
গজনির শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং এটিকে সমৃদ্ধিশালী ও আকর্ষণীয় নগরীতে পরিণত করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া সমরনায়ক হিসেবে একটি বিশাল সেনাবাহিনী পোষণের জন্য তার অনেক অর্থের দরকার ছিল। ফলে ধন-ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশকে তিনি তার প্রয়োজনীয় অর্থভাণ্ডার মনে করে সেখানে ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করেন। আর ভারত থেকে সংগৃহীত অর্থ তিনি স্বীয় রাজ্য গজনির উন্নতিকল্পে ব্যয় করেন।
গ) উদ্দীপকের সাথে সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ সাদৃশ্যপূর্ণ।রাজ্যবিস্তার, ধনৈশ্বর্য আহরণ, সিন্ধুরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ, ইসলাম বিস্তার প্রভৃতি পরোক্ষ কারণে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন একটি ঘটনা তাকে সিন্ধু আক্রমণের সুযোগ এনে দেয়। আর এ ঘটনাটি হলো সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক মুসলমানদের ৮টি জাহাজ লুট। উদ্দীপকে তাহের মহাজন কর্তৃক বাদল মিয়াকে আক্রমণের ক্ষেত্রে লুষ্ঠনের একটি ঘটনাই প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। চা ব্যবসায়ী তাহের মহাজনের চা বোঝাই ৮টি ট্রাক বাদল মিয়ার লোকেরা ছিনতাই করে এবং বাদল মিয়া তা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটিও এরূপ। সিংহলে অবস্থানকারী বেশকিছু আরব বণিক মৃত্যুমুখে পতিত হলে, সিংহলরাজ আটটি জাহাজে করে তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও মূল্যবান উপঢৌকন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এবং খলিফার দরবারে প্রেরণ করেছিলেন। জাহাজগুলো যখন সিন্ধুর দেবল উপকূলে এসে পৌছায় তখন জলদস্যগণ জাহাজগুলো লুন্ঠন করে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধুর রাজা দাহিরের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে সিন্ধু আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন এবং তিনি সিন্ধু বিজয় করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকটি আরবদের সিন্ধু আক্রমণের প্রত্যক্ষ কারণকেই ইঙ্গিত প্রদান করে।
ঘ) উদ্দীপকের ন্যায় সিন্ধু বিজয়ের ক্ষেত্রে জাহাজ লুন্ঠনের কারণটিই একমাত্র কারণ ছিল না। এর পেছনে আরো অনেক কারণ ছিল। উদ্দীপকে মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের শুধু প্রত্যক্ষ কারণটিই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সিন্ধু বিজয়ের পেছনে এটি ছাড়াও আরো অনেক কারণ বিদ্যমান ছিল।অষ্টম শতকের সূচনাতে মেকরান এবং বেলুচিস্তান আরবদের হস্তগত হওয়ায় তারা সিন্ধু দেশের অতি সন্নিকটে এসে পড়ে। ভারতীয় হিন্দু রাজাদের বৈরী মনোভাব ও সামরিক উস্কানির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রসারণ ব্যতীত খিলাফতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মুসলমানগণ বাধ্য হয়ে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। ব্যবসা- বাণিজ্যের সম্প্রসারণ সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে আরবগণ ভারতবর্ষ আক্রমণে প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে সামুদ্রিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও ভারতবর্ষ আক্রমণ মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে আরব খলিফার নিকট প্রেরিত উপঢৌকন ও আরব বণিকদের বাণিজ্যিক আটটি জাহাজ দেবল বন্দরে জলদস্য কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে হাজ্জাজ দাহিরের কাছে লুণ্ঠিত দ্রব্যের ক্ষতিপূরণ ও জলদস্যুদের শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির উক্ত দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। দাহিরের এই ঔদ্ধত্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে যাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু ও মুলতান অভিযানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ লুন্ঠন ছিল আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ। তবে সিন্ধু বিজয়ের পেছনে এর বাইরেও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল।