রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন 'গৃহ' প্রবন্ধে তৎকালীন সমাজে নারীর মূল্য ও মর্যাদার দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।তিনি এতে অধিকাংশ ভারতীয় নারীর গৃহসুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। লেখিকা একবার জামালপুরে তার আত্মীয়ের বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে সেখানে কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তিনি যে বাড়িতে যান সেই বাড়ির মেয়েরা কখনই বাইরে বের হন না, অর্থাৎ নিজ বড়ির আঙিনার মধ্যেই তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ। তারা কখনো যানবাহনেও চড়েননি। পরিজনের বাড়িগুলোও পাশাপাশি। ফলে তাদের বাইরে যেতেই হয় না। এটি তারা তাদের ঐতিহ্য ও বংশগৌরব মনে করেন। এমন অবস্থায় থাকার পরও তাদের মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। অন্তঃপুরবাসী এই নারীদের জীবনযাপন সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখিকা যেসব আলোচনা করেছেন তাতে তৎকালীন সমাজে নারীর দুর্গতি ও শোচনীয় অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। সাধারণত কর্মক্লান্ত মানুষ গৃহে ফিরে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, বিশ্রামের অবকাশ পায়। অবকাশ যাপনের সুযোগ পুরুষের থাকলেও নারীর নেই। ফলে তারা গৃহে অবস্থান করেও গৃহের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা অন্তঃপুরে অন্তরীণ হয়ে মানবেতর জীবন কাটায়। নারীরা তাদের অভিভাবকের বাড়িকে নিজের গৃহ ভাবতে সাহস পায় না। কারণ তারা সেখানে নানাভাবে নিগৃহীত হয়। নারীর সেই অসহায়ত্ব ও দুরবস্থার দিকটি লেখিকা বর্ণনা করেছেন। তিনি কুমারী-সধবা-বিধবা সব শ্রেণির নারীর সামাজিক অমর্যাদা এবং পুরুষ দ্বারা অবহেলার শিকার হওয়ার করুণ বর্ণনা দিয়েছেন। প্রবন্ধে বিধবাদের অবস্থা শোচনীয় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে দেখা যায়, স্ত্রী দিনের পর দিন মানবেতর জীবনযাপন করলেও স্বামী সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি।বরং স্বামীর জৌলুসে তা ঢাকা পড়ে গেছে। লেখিকা তৎকালীন নারীদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে নারীর গৃহমুখী, অসুখী, পরাধীন জীবনের যন্ত্রণাকে নির্দেশ করেছেন।তিনি বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখানে অন্তর্মুখী জীবনে অভ্যস্ত হসিনা, জমিলার সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের প্রতি অবহেলা ও অমর্যাদার পরিচয় পেয়েছেন। স্বামী যাই করুক না কেন, তারা কোনো প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রাখে না। স্বামী অনেক জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জায় থাকলেও স্ত্রী থাকে জীর্ণ অবস্থায়। 'গৃহ' প্রবন্ধে লেখিকা স্বামী ও স্ত্রীর মূল্য ও মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য ব্যাখ্যা করেছেন। পুরুষ নারীদের নানাভাবে শাসনে রাখার নিয়ম তৈরি করে এবং প্রয়োগ করে। অথচ তারা নিজেরা থাকে সেই আইনের ঊর্ধ্বে।