উদ্দীপকঃ- আশরাফ জুমার আলোচনায় পূর্ববর্তী যুগের একটি জাতির কথা শুনল যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা বিভিন্ন নিয়ামত দিয়েছিলেন অথচ তারা বার বার আল্লাহ্ ও রাসুলের অবাধ্য হয়েছিল। বাড়িতে এসে ঘটনাগুলো সে মায়ের কাছে বলল। তার মা বললেন, এ জাতিটি একটি হত্যাকাণ্ডের সূত্র উদ্ধারে আল্লাহর নির্দেশকে সহজভাবে পালন না করে অতিরিক্ত প্রশ্ন করে নিজেরাই বিপদে পড়েছিল।
ক. আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.) কে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?
খ. হযরত আদম (আ.) কোন বাক্যটি দ্বারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত জাতিটিকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতসমূহ বর্ণনা কর।
ঘ. আশরাফের মা যে ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন তা সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ-
ক) আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) কে সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছিলেন।
খ) 'হে আমাদের প্রভৃ! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি' হযরত আদম (আ.) এ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহর ক্ষমা চেয়েছিলেন।হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টির পর ঘটনার বিবর্তন ও ধারাবাহিকতায় তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের সাথে ইবলিসের চিরস্থায়ী শত্রুতার সূচনা করে। শেষ পর্যন্ত তার ষড়যন্ত্রে নিতান্ত অনিচ্ছায় হযরত আদম (আ) আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করেন। এরপর আল্লাহ আদম দম্পতিকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। দুনিয়ায় আসার পর আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘনের জন্য আদম (আ) সীমাহীন লজ্জা ও অনুশোচনায় পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দয়াপরবশ হয়ে আদম (আ) কে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ পদ্ধতি শিখিয়ে ইরাশাদ করেন, "আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন আর আমাদের প্রতি রহম না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্গত হব।" আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া এ বাণী ও পদ্ধতিতে অব্যাহত বিনীত প্রার্থনার পর আল্লাহ তায়ালা দয়াপরবশ হলেন এবং তাঁর তাওবা কবুল করলেন।
গ) উদ্দীপকে বনি ইসরাইল সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের অসংখ্য নিয়ামত দান করেছিলেন।হযরত ইয়াকুব (আ)-এর অপর নাম ইসরাইল। তার বংশধরেরাই ইতিহাসে বনি ইসরাইল বা ইসরাইল জাতি হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ তায়ালা এই জাতিকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছিলেন। আশরাফের মা এ জাতির কথাই বলেন।উদ্দীপকের জাতি তথা বনি ইসরাইলকে আল্লাহ একসময় পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। তাদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক নবি প্রেরণ করেন, তাদেরকে বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং অসংখ্য নিয়ামত দান করেছিলেন। এই জাতি বারবার আল্লাহর অবাধ্যতা করলেও মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশে বনি ইসরাইলদের জন্য হযরত মুসা (আ) শরিয়ত আনতে সিনাই পর্বতমালায় গেলে তারা সামেরি নামক এক গো- পূজারির প্ররোচনায় গোবৎস পূজায় লিপ্ত হয়। এটি ছিল জঘন্যতম শিরক। আল্লাহ তায়ালা তাদের এ অপরাধও ক্ষমা করে দেন। এছাড়া অবাধ্যতা ও পাপাচারের শাস্তিস্বরূপ তিহ উপত্যকায় তাদের অবস্থানকালে মহান আল্লাহ তাদেরকে প্রচণ্ড রোদে মেঘমালা দান করেন। খাদ্যাভাব দূরীকরণে বেহেশতি খাবার মান্না ও সালওয়া প্রদান করেন। পিপাসা দূরীকরণে পানি-দান করেন। এভাবে নানা অনুগ্রহ দান করে আল্লাহ বনি ইসরাইলদের হেফাজত করেছেন।পরিশেষে বলা যায়, সমকালীন সব জাতির ওপর আল্লাহ বনি ইসরাইলদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। তাদের বংশে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করে আল্লাহ তাদের হেদায়েতের ব্যবস্থা করেছেন।
ঘ) আশরাফের মা বনি ইসরাইলের গরু জবেহের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।হযরত ইয়াকুব (আ)-এর অপর নাম ইসরাইল। তার বংশধরেরাই ইতিহাসে বনি ইসরাইল বা ইসরাইল জাতি হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, যা তাদের বক্র অন্তরের পরিচয় ফুটে ওঠেছিল। আশরাফের মা সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।উদ্দীপকের আশরাফের মা বনি ইসরাইলদের প্রতি আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের 'কথা উল্লেখ করে তারা যে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ করেন। ঘটনাটি হলো- বনি ইসরাইলের এক যুবক তার সুন্দরী চাচাতো বোনকে বিয়ের প্রস্তাব করলে তার চাচা সে বিয়েতে অনুমতি দেননি, এজন্য যুবকটি তার চাচাকে হত্যা করে রাতের আঁধারে দূরে এক জায়গায় ফেলে আসে। অতঃপর হত্যাকাণ্ড উদঘাটনের জন্য বনি ইসরাইলরা মুসা (আ) এর কাছে যায়। হযরত মুসা (আ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি প্রাপ্ত হয়ে তাদেরকে গাভি জবেই করতে আদেশ করেন। গাভি জবেহ যাতে করতে না হয় এজন্য বনি ইসরাইলরা বারবার মুসা (আ) কে গাভির বৈশিষ্ট্য, রঙ, গাভির বয়স, শারীরিক গঠন সম্পর্কে অযথা প্রশ্ন করতে থাকে। হযরত মুসা (আ) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সবকটি প্রশ্নের জবাব দেন। অতঃপর তারা সে গাভি জবেহ করে এবং গাভির এক টুকরো মাংস মৃত ব্যক্তির মুখে স্পর্শ করলে মৃত ব্যক্তি তার ভাতিজার নাম বলে আবার মৃত্যুবরণ করে। অত্র ঘটনায় দেখা যায় বনি ইসরাইলরা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা এবং দুষ্টামি করতে শুরু করে। অথচ তাদের উচিত ছিল হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে গাভি জবেহ করা। তাহলে যেকোনো গাভি জবেহ করলেই হুকুম আদায় হয়ে যেত।
পরিশেষে বলা যায় শরিয়তের নির্দেশ যেভাবে এসেছে ঠিক সেভাবেই আদায় করা উচিত, অন্যথায় শরিয়তের হুকুম কঠিন হয়ে যায়।